পাঠ প্রতিক্রিয়া - মিশর সিরিজ - উইলবার স্মিথ

পাঠ প্রতিক্রিয়া
--------------------
মিশর সমগ্র - উইলবার স্মিথ (Wilbur Smith)
--------------------------------------------------
আজ্ঞে না, এই নামের কোন বইয়ের অস্তিত্ব নেই। একটি অনলাইন ফোরামে প্রাপ্ত পিডিএফ বই এটি। উইলবার স্মিথের লেখা চারটি বিশ্বখ্যাত বই, যা ইজিপ্ট সিরিজ নামে বিখ্যাত, তার বাংলাদেশী অনুবাদ একসাথে নিয়ে এই মিশর সমগ্র তৈরি করা হয়েছে।
উইলবার স্মিথের বইগুলির এবং অনুবাদকের নাম যথাক্রমে
রিভারগড - মখদুম আহমেদ
দ্য সেভেনথ স্ক্রোল - মখদুম আহমেদ
ওয়ারলক - শাহজাহান মানিক
দ্য কোয়েস্ট - শওকত হোসেন
----------------------------------------------------------
তাহলে এই বইয়ের রিভিউ লিখছি কেন? মানে, এটা যদি কোথাও পাওয়া না -ই যায় তাহলে লিখছি কেন? কারণ প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার এই বইটির কনটেন্ট আমাকে এক সপ্তাহ মিনিমাম দরকারী কাজটুকু ছাড়া বাকি কিছু করতে দেয়নি। আমার পাঁচমাসের খোকা সামলানো, রান্নাবান্না, আর মিনিমাম ঘুমটুকু ছাড়া বাকী সমস্ত সময় আমি এই বইতে ডুবে ছিলাম। বিশেষত প্রথম দুইটি উপন্যাস, আমার ইচ্ছে করছিল কিন্ডলটা হাতে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখতে। গল্পের অসামান্য প্লট, দুর্দান্ত গতি, এবং মখদুম আহমেদের মাখন অনুবাদ। এমনিতেই প্রাচীন মিশর আমার খুব প্রিয় একটা টপিক, শুধু মিশর না, প্রাচীন যে কোনো ঐতিহাসিক উপন্যাস বা গল্প, পুরাণ, ফোকলোর বা উপকথা আমার খুবই প্রিয় বিষয়।


১. রিভার গড - উপন্যাসটির সময়কাল হল প্রাচীন মিশর। এই উপন্যাসটি একজন খোজা ক্রীতদাস টাইটা বা তাইতা র কলমে লিখিত। টাইটা, তার মালিক রাজমন্ত্রী ইনটেফ, সুন্দরী মালিক কন্যা লস্ট্রিস, বীর যোদ্ধা ট্যানোস এবং মিশরের তৎকালীন ফ্যারাও মামোস কে ঘিরে কাহিনী আবর্ত হয়েছে। কাহিনীবিন্যাস অত্যন্ত মনোজ্ঞ এবং ঘটনাবহুল, গতিশীল এবং আকর্ষনীয়।
মখদুম আহমেদের অনুবাদ বেশ ভালো, মানে বাংলাদেশী অনুবাদ আমি সাধারণত পছন্দ করি না, তবে এই লেখা পড়তে কষ্ট হয় না।

২. দ্য সেভেনথ স্ক্রোল - এই উপন্যাসের সময়কাল হল আধুনিক। এক ইজিপশিওলজিস্ট রোয়েন আল সিমা, এবং এক কালেকটর অভিযাত্রী নিকোলাসের অভিযান টাইটার সপ্তম স্ক্রোলের উপর ভিত্তি করে ফারাও মামোসের গুপ্তধনের খোঁজে। যেখানে পথে পথে বিপদ এবং গুপ্তধনের খোঁজে আরো এক দাবীদার ক্রমাগত চেষ্টা চালায় তাঁদের খুন করার।
প্রথম বইটির মত এই বইটিও আনপুটডাউনেবল। মখদুম আহমেদের অনুবাদও ভালো।

৩. ওয়ারলক - এই বইটি আমার বাকি দুটির থেকে বেশি ভালো লাগেনি, এই গল্পটি প্রথম গল্পের একশ বছর পরের ঘটনা। ঘটনাচক্রে টাইটা তখনও বেঁচে এবং প্রভূত অলৌকিক শক্তির অধিকারী। সত্যি বলতে ঐতিহাসিক গল্পে ফ্যান্টাসির বাড়াবাড়ি আমার না পসন্দ, তবুও গল্পের প্লট এতই ঠাসবুনন যে পড়ে ফেলা যায়। কিন্তু এখানে আরেক অসুবিধা হল, শাহজাহান মালিকের অনুবাদ। অনুবাদের কোয়ালিটি খুবই সাধারণ। শুধুমাত্র গল্পের টানেই পড়ে গেছি এই উপন্যাসটিও।

৪. দ্য কোয়েস্ট - এই গল্পটি আগের গল্পটির কুড়ি বছর পরেরকার গল্প, আরো বেশি অলৌকিকত্বের ছোঁয়া। এবং আগেরটির থেকেও খারাপ অনুবাদ। মানে আমি ঠিক করতে পারিনি, যে শওকত হোসেন আর শাহজাহান মালিকের মধ্যে কে বেশি বাজে অনুবাদ করেছেন। এটাও গল্পের টানেই পড়ে গেছি, কিন্তু মাঝে মাঝে বেশ কষ্ট হয়েছে পড়তে। গুডরিডস বা উইকিপিডিয়ার মতেও প্রথম তিনটি বইই সবথেকে বেশি জনপ্রিয়, বিশেষত প্রথম দুটি।

বইগুলিতে বানান নিয়ে যথেচ্ছাচার করা হয়েছে। যদিও বাংলা বানান এবং বাংলাদেশী বানান বেশ কিছুটা আলাদা, তবুও প্রচুর বানান ভুল বারে বারে নজরে পরে এবং বিরক্তির কারণ ঘটায়।

পরিশেষে বন্ধুদের জানাই, প্রথম দুটি বই সত্যিই অনবদ্য,এবং আমি উইলবার স্মিথের এই দুটি বই তো অবশ্যই সংগ্রহে রাখব এবং আবার ইংরেজি ভাষায় পড়ার ইচ্ছে রাখি। আমার মত পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, ফ্যান্টাসি উপন্যাস যারা পছন্দ করেন, তাঁদের বইগুলি দারুণ লাগবে গ্যারান্টি
দিতে পারি। তবে এই বইতে কিন্তু যথেচ্ছ যৌনতার ছোঁয়া আছে, কাজেই ষোল বছরের থেকে ছোট পাঠক পাঠিকাদের উপহার না দিতেই অনুরোধ করব।
মখদুম আহমেদ বাকি বই দুটির অনুবাদ করেছেন কি না জানা নেই, থাকলে সংগ্রহ করার ইচ্ছা রইল।

বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্তিগত। এটি পড়ার পর পিডিএফ ফাইলটি পারসোনাল মেসেজ করে চাইবেন না, যে অনলাইন ফোরাম থেকে পেয়েছি, সেখানে বই শেয়ারিং করা মানা। আমি ব্যান হতে চাইনে।

Comments