অলৌকিক

রোজকার অভ্যেসের মতো সেদিনও কাকভোরেই উঠে পড়লেন পুরুত মশাই । তখন শুধু মাত্র পাখপাখালিরা তাদের বাসা ছেডে বাইরে বেরোতে শুরু করেছে। পুরুতমশাই জপতপ প্রার্থনা সেরে কাজে মন দিলেন। এই দেশে যেখানে ধার্মিক লোকেরা তাঁকে সমীহ করে চলে , অন্যান্য পাঁচজনে মান্য করে চলে , আধ্যাত্মিক গুরু বলে মানে, সেই দেশের দশের কাজ। পুরুতমশাইয়ের দোরগোড়ায় তাঁর নিজের হাতে পোঁতা ছোট খেজুরগাছ, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে তাঁর গাছে জল দেওয়া হয়ে যায় , তারপর চেয়ে দেখেন সূর্য উঠছে - লাল গোল বলটা যেন আকাশের গায়ে আছড়ে পড়ে শিশিরভেজা গাছের পাতায় রশ্মি ছেটাতে থাকে।
সেদিন সকালে পুরুত্মশাই যেই খেজুর গাছে জল দেওয়া সেরে ভেতরে আসতে যাবেন, এক দঙ্গল দুঃখী দুঃখী লোক, মুখে তাদের দুশ্চিন্তা মাখানো, তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো । তাঁদের মধ্যে একজন সাহসে ভর করে পুরুতমশাইকে অনুনয় করে বলতে লাগল "দাদাঠাকুর , আমাদের বাঁচান, আপনি ছাড়া অন্য কোন মনিষ্যি এ কাজ পারবে না , আমাদের গিন্নীমা কদিন হল যমরাজার দুয়ারে নিঃশ্বাস ফেলছে, তিনি শেষ নিঃশ্বাসটি ফেলার আগে একটিবার আপনার আশীর্বাদ পেতে চান।"
-"তা মা-ঠাকরুনটি কোথায় "
এই কাছেই এক গ্রামে, আমাদের বাহনও তৈরি, বলে লোকটা আঙুল তুলে দেখালো দুটো গাধা জিন পরে তৈরি হয়ে আছে।
পুরুতমশাই বললেন " বাছারা, আমার যেতে অমত নেই । তবে তোমরা একটু দাঁড়াও , আমার বাকি কাজকর্মের একটু ব্যবস্থা করে আসি । শিষ্যদের খবর দিতেও হবে"
"আজ্ঞে সময় যে মোটেই নেই", তারা সব একবাক্যে হাঁ হাঁ করে উঠল। গিন্নীঠাকরুন যে মরতে বসেছেন। হয়তো আমরা যেতে যেতেই সব শেষ হয়ে যাবে। দয়া করে চলুন দাদাঠাকুর। দুপুর হওয়ার আগেই ফিরে আসতে পারবেন, এইটুকু পথ তো মোটে । আমরা লোক রেখে যাচ্ছি, সে না হয় বলে দেবে আপনি কোথায় যাচ্ছেন । "
"আচ্ছা, তাহলে চল।" পুরুতমশাই রাজি হয়ে গেলেন। তিনি একটা গাধায় চড়ে বসলেন , আর অন্যটায় উঠল সেই বেচারা , যার মালকিনের এখন তখন । দুইজন লোক রয়ে গেল , শিষ্যদের খবর দেওয়ার জন্য, পইপই করে সব বুঝিয়ে দিলেন পুরুতমশাই, কাকে কি বলতে হবে। তারপর রওয়ানা হলেন । বাদবাকি লোকজন তাঁদের পিছন পিছন জোরকদমে হাঁটা লাগালো।
এইবার ঘন্টার পর ঘন্টা তারা চলতে লাগল । মাঝেমাঝে পুরুতমশাই তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেন কোথায় যাওয়া হচ্ছে, আর তারা গাধা বেচারাকে ছপটি লাগায় আর বলে, "এই যে ,প্রায় এসে গেছি !" শেষমেশ যখন ভরদুপুর তখন সেই গ্রামের হদিশ মিলল । গ্রামবাসীদের অভ্যর্থনা দেখে পুরুতমশাইয়ের মন ভরে গেল। কি ভক্তি সকলের, তাঁকে সবাই কত মানে । সবাই মিলে একজোট হয়ে গ্রামের একটি ঘরের দিকে চলল, মোড়লের ঘর । পুরুতমশাইকে নিয়ে যাওয়া হল একটি ঘরে, সেখানে এক গিন্নী গোছের মাঝবয়সী মহিলা শুয়ে আছেন, কোনরকম নড়াচড়া করছেন না। পুরুতমশাই মহিলাটিকে ডাকাডাকি করলেন, কিন্তু কিছু লাভ হল না। ঘরভর্তি লোক কান্নাকাটি করতে লাগল, 'মাঠাকরুন মনেহয় আর নেই '। অগত্যা পুরুতঠাকুর স্বস্তিবাক্য বলতে শুরু করলেন। বলা শেষ হয়েছে কি হয়নি, হঠাত তাঁর মনে হল, মড়াটা যেন নড়ছে । তারপর হঠাৎ চোখ খুলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিল, তারপর আচমকা ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলল। পুরুতমশাই তো বটেই সব্বাই ভয় পেয়ে গিয়ে চুপ করে গেল। এ কি রে বাবা, ভুতটুতে ধরেছে নাকি ?
সেই সব কিছু না, কিছুক্ষন পর কান্না থেমে গেল, চোখ মুখ স্বাভাবিক হয়ে গেল, তারপর তিনি পাশ ফিরে ফিসফিস করে শুধোলেন, "আমি এখন কোথায়?"
পুরুতমশাই তো হতভম্ব হয়ে বললেন "বাছা, তুমি তোমার নিজের বাড়িতেই আছ"
-"একটু জল খাব!"
চারদিকে শোরগোল পড়ে গেল,ওরে কে কোথায় আছিস, জলের কুঁজোটা নিয়ে আয়। জল এনে দিতেই গিন্নীঠাকরুন ঢকঢক করে অনেকটা জল খেয়ে ফেলে বললেন, খিদে পেয়েছে।
বাড়ির সবাই অমনি খাবার দাবারের জোগাড় করতে শুরু করল, গিন্নী গপগপিয়ে খেতে লাগলেন ও বাকি সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাই দেখতে লাগল। তারপর দিব্যি তিনি নিজে খাট থেকে নেমে হাত ধুতে চলে গেলেন, যেন তাঁর কোনদিন কিচ্ছু হয়নি, এক্কেবারে সুস্থ সবল।

তাই দেখে সব লোকজন একসাথে পুরুতমশাইকে সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করে ফেলল। বারবার বলতে লাগল,'' সন্নিসিঠাকুর গো, তুমি সাক্ষাত ভগবানের দূত। যেই তুমি কি সব মন্তর পড়ে দিলে, আমদের গিন্নীমা এক্কেবারে ঠিক হয়ে গেল গো! মরা মানুষ কে বাঁচিয়ে তুললেন আপনি। এখন কি করেই বা আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই, কি দিয়েই বা আপনার উপকারের ঋণ শোধ করি?''
পুরুত মশাই তখনও সেই অবাক কান্ডের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি কোনমতে বললেন," আহা, আমি আর কীই বা কতটুকু করেছি যে পুরস্কার বা ধন্যবাদের কথা উঠছে? যা ঘটল সবই তো ভগবানের দয়াতে।"
"সে আপনি যা বলেন বলুন," বাড়ির কর্তা উত্তর দিলেন।" যাই হোক না কেন, আজকের ঘটনাটা পুরোপুরি অলৌকিক। দাদাঠাকুর, ভগবানের নিশ্চয়ই ইচ্ছে ছিল আপনার হাত দিয়েই তাঁর লীলা দেখাবেন। আপনি যে আমাদের এই গরিবখানায় পা দিয়েছেন, এতে আপনার মানসম্মান আর সৌভাগ্য দুইই বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের যতটুকু সাধ্য আপনার মত মহান পুরুতঠাকুরের যত্নআত্তি করব, দোহাই আপনার, এতে গররাজি হবেন না। "
তারপর বাড়ির কর্তার হুকুমে এক বিশাল ঘরে অতিথিসেবার ব্যাবস্থা করে পুরুতমশাইকে সেই ঘরে এনে তোলা হল। কিন্তু পুরুত মশাই যতবার যাওয়ার কথা তোলেন, ততবার বাড়ির কর্তা তাঁকে নানারকম দিব্যি দিয়ে আঁটকে দিলেন, অন্তত তিনটে দিন পার না হলে যথেষ্ট যত্ন হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনদিন ধরে পুরুতমশাইয়ের খাতির যত্ন দেখে কে? পুরুতমশাইয়েরও বেশ ভালোই লাগছিল। তিনদিন পর যত্নআত্তির পালা শেষ হলে , বাড়ির কর্তা একটা গাধার পিঠে তুলে দিয়ে বাড়িতে বানানো রুটি , নানারকম ডাল , আর মুরগীর ভেট সাজিয়ে দিলেন, আর সেইসঙ্গে হাতে ১০টাকা দক্ষিণাও দিলেন। টাকা পেয়ে পুরুতমশাইতো ভারি খুশি হলেন।
গাধার পিঠে চড়ে গ্রামের সীমা পেরিয়েছেন কি পেরোননি, এমন সময়, আবার একদল লোক তাঁকে ঘিরে ফেলল, এলাকায় বড় ডাকাতের উপদ্রব, ভয় পেয়ে গেলেন পুরুত মশাই, একটা সর্দার টাইপের লোক তাঁর দিকে এগিয়ে এল, এসে হঠাৎ তাঁর পা ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, " দাদাঠাকুর গো, আপনার অলৌকিক কীর্তিকলাপের খবর সমস্ত গ্রামে চাউর হয়ে গেছে, আমার বাবার অবস্থা এক্কেবারে যায় যায়, দয়া করে তাঁকে বাঁচিয়ে তুলুন গো, বাবাকে ছাড়া আমি যে চোখে অন্ধকার দেখি !"
"কিন্তু আমি তো কোন অলৌকিক করিনি, তাছাড়া আমি বাড়ি যাব বলে গোছগাছ করে ফেলেছি বাছা! "
" তা বললে কি হয় দাঠাকুর, সবাই জানে আপনি ভগবান, একটুও সময় লাগবে না , আমার সাথে গিয়ে বাবাকে একটু আশীর্বাদ দিয়ে আসুন দয়া করে। তারপর তিনি না বাঁচলেও আমার কষ্ট হবে না। কিন্তু বাবাকে দেখে না আসা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়ছি না, এই আমি বলে দিলুম।" বলে লোকটা গাধার রাশ ধরে চলল ।
-"ওহে! তা তোমার বাড়ি কোথায় ? "
-"একদম কাছে, এই ৫ মিনিটের রাস্তা দাদাঠাকুর!"
পুরুতমশাই রাজি হওয়া ছাড়া আর কিই বা করতে পারেন। তারপর একঘন্টার পথ পেরিয়ে পরের গ্রামে গিয়ে দেখলেন এক্কেবারে আগের অবস্থা। তবে ইনি মারা যাননি, সঙ্কটাপন্ন অবস্থা একেবারে। তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা এই আশায় দুলছে, ফের এই হতাশায় । কিন্তু যেই পুরুতমশাই স্বস্তিবাক্য বলেছেন, তখনি সেই অলৌকিক কান্ড আবার ঘটল, মুমূর্ষু রোগী দুই মিনিটে সটান খাড়া হয়ে বসে খাবারদাবারের জন্য হাঁকডাক করতে লাগল। এই ঘটনায় সব্বাই আবার তাজ্জব হয়ে গেল। কিন্তু পুরুতমশাই এবার অবাক হননি, তিনি যেন বুঝতেই পেরেছেন, এক ঐশ্বরিক শক্তি তাঁকে ভর করেছে, তাই এবার যখন তাঁকে যত্নআত্তির কথা বলা হল, তিনি চট করে রাজি হয়ে গেলেন।
তিনদিন পর আতিথেয়তার পালা চুকতে, তাঁকে আবার গাধায় তুলে দেওয়া হল, অনেক উপহারের সাথে ও ২০টাকা প্রনামী। এবার তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালেন আরেক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত চাষি, তাঁর একমাত্র পঙ্গু ছেলেকে ঠিক করে দিতে হবে। তা তাঁর সাথেও গেলেন তিনি, এখানেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। পঙ্গুছেলের মাথায় তাঁর আশীর্বাদের হাত ছোঁয়াতেই সে দুই পায়ে খাড়া হয়ে উঠল। গাঁয়ের ছেলেবুড়োর দল আনন্দে আটখানা হয়ে বাহবা দিতে লাগল, এবং তিনদিন ধরে প্রচুর যত্নআত্তির পর পঞ্চাশ টাকা প্রনামী পেলেন তিনি।
এইবার তিনি পড়লেন চিন্তায়, রাস্তায় যা ডাকাতের উপদ্রেব, এত টাকা নিয়ে তিনি ফিরবেন কি করে? এই কথা জানাতেই তাঁর নিমন্ত্রণ কর্তা বললেন, "কোন চিন্তা করবেন না , আমরা আপনাকে গাঁয়ে পৌঁছে দেব, আপনার নিজের লোকের কাছে। কলজে দিয়ে আপনার রক্ষা করব। আপনি তো আমাদের কাছে সোনার মত দামী । "
লোকগুলো তাঁর গাধার পিছনে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর গুণগান করতে লাগল, আর তিনি যে সব অলৌকিক কান্ড ঘটিয়েছেন তাঁর খুঁটিনাটি জাহির করে বলতে লাগল। পুরুতমশাই তাঁদের কথা শোনেন আর যা ঘটে গেছে তা মনে মনে চিন্তা করেন। শেষমেশ তিনি বলে উঠলেন , "সত্যি, কদিন ধরে যা ঘটছে অবাক কান্ডই বটে। আচ্ছা, এও কি সম্ভব যে এইসব অলৌকিক কান্ড আমার একার আশীর্বাদেই ঘটছে? "
-"কেন দাদাঠাকুর? আপনার কি প্রত্যয় হচ্ছে না? "
-"বাছারা, আমি তো আর ভগবানের বরপুত্র নই, যে এক সপ্তাহে এতসব কান্ড ঘটাতে পারব। আসলে কি জানো, তোমাদের জন্যই আমি এতশত আশ্চর্য কান্ড ঘটাতে পেরেছি।"
"আমাদের জন্য ?" একসাথে সব্বাই জিজ্ঞাসা করল , "আপনি কি বলতে চান দাদাঠাকুর? "
"তোমাদের বিশ্বাস" , পুরুত মশাই প্রত্যয়ের সাথে এক নাগাড়ে বলে যেতে থাকলেন। "তোমাদের বিশ্বাসেই এতসব সম্ভব হয়েছে। তোমরা হয়তো মানবে না, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু ,তর্কে বহুদূর। বাছারা বিশ্বাসের মত শক্তি হয় না। পাথরের মধ্যে যেমন জল থাকে, তেমনি হৃদয়ের গভীরে বিশ্বাস থাকে।" পুরুতমশাই এইসব বলতে বলতে চলছেন, আর তাঁর পেছনে লোকগুলো মাথা নাড়ছে। পুরুতমশাই এত উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, যে খেয়ালই করলেন না লোকগুলো একের পর এক চুপিসাড়ে কেটে পড়ছে। যখন তিনি তাঁর গ্রামের সীমানায় , তখন তিনি সহযাত্রীদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে দেখলেন, তিনি এক্কেবারে একা। দেখে বিস্ময়ে তাঁর মুখে বাক্য সরল না।
এ বিস্ময় অবশ্য বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। কেননা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেখলেন তাঁর শিষ্যরা, সহকর্মী পুরুতরা, আর তাঁর গাঁয়ের জমিদার, সবাই ছুটে এসে তাঁর সাথে কোলাকুলি আর পেন্নাম ঠুকতে লাগল। তাঁদের গাল বেয়ে দরদর করে আনন্দ আর আবেগের অশ্রু বইতে লাগল। জমিদার তাঁর সাথে কোলাকুলি করে বললেন, "আদ্দিনে আপনি ভালোয় ভালোয় আমাদের কাছে ফিরে এসেছেন, লোকগুলো তাহলে কথা রেখেছে। দাদাঠাকুর,ওরা যখন আপনাকে মুক্তি দিয়েছে, তখন টাকাটা না হয় ওরা আত্মসাৎ করুক। দাদাঠাকুর, আপনার দাম টাকার চাইতে অনেক বেশি। "
টাকা শব্দটা পুরুতমশাইয়ের কানে আসতে তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন,"কিসের টাকা?"
-"যে টাকাটা আমরা সেই দুটো লোককে দিলাম? "
-"কোন লোক?"
যে ছেলেধরার দল আপনাকে ধরে নিয়ে গেল, সেই দলের দুটো লোক। প্রথমে তো বলল পাঁচ হাজারের কমে আপনাকে কিছুতেই ছাড়বে না। আপনি সোনার মত দামী। অনেক কাকুতি মিনতি করে দুই হাজারে রাজি করতে পেরেছি। এক হাজার মন্দির তহবিল থেকে আর এক হাজার আমি দিলাম আমার তরফ থেকে।
"দুই হাজার টাকা ?" পুরুতমশাই চেঁচিয়ে উঠলেন। "আমার জন্য এত টাকা গচ্চা গেল ?
- লোকগুলো কি বলল ? আমাকে ছেলেধরায় ধরে নিয়ে গেছে ? "
"আজ্ঞে হ্যাঁ ", দুটো লোক এসে বলল, তারা দেখেছে, আপনি যখন খেজুরগাছে জল দিচ্ছিলেন, তখন একদল লোক এসে আপনাকে ধরে নিয়ে গেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি , তারপর তিনদিনেও আপনি ফিরলেন না যখন, তখন চিন্তা শুরু হয়। পাঁচদিন পর কয়েকটা লোক এসে জানায়, আপনার জন্য যদি মুক্তিপণ না দি তাহলে আপনার কপালে মৃত্যু, কিন্তু টাকা পেলে ওরা আপনাকে অক্ষতভাবে ফেরত পাঠাবে।
পুরুতমশাই কথাগুলো এতখনে তলিয়ে ভাবলেন। যা কিছু ঘটেছে সেসব ঘটনা তাঁর মনে পড়তে লাগল। তিনি নিজের মনে বললেন, "ওই সব মৃত আর মৃতপ্রায় লোক, পঙ্গু ছেলে যারা আমার আশীর্বাদ পেয়েই লাফঝাঁপ শুরু করেছিল ! কি ধুরন্ধর !"
পুরুতমশাইয়ের নিজের লোকেরা আবার সামনে এগিয়ে এল , তারা তাঁর শরীর আর জামাকাপড় পরীক্ষা করতে করতে বলল , "দাদাঠাকুর , আপনার নিরাপত্তার চেয়ে বড়ো আর কিছু নেই, আশাকরি যে কদিন আটকে ছিলেন, ব্যাটারা আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। তা ব্যাটারা কেমনধারা ব্যবহার করেছে শুনি ? "
তাজ্জব পুরুতমশাই উত্তর দিলেন, "ওরা আমাকে দিয়ে অলৌকিক সব কান্ড ঘটিয়ে নিল - অলৌকিক সব কান্ড - যার জন্য কিনা মন্দিরের এতগুলো টাকা গচ্চা গেল । "

এক মিশরীয় লোকগাথার ছায়া অবলম্বনে

Comments