বোবো স্টেটাস ৩

আবার সে এসেছে ফিরিয়া, মানে আমিই ফিরে এসেছি আর কি। আমি, মানে বোবো, প্রোফাইলধারিণীর ছা। মেঘে মেঘে বেলা কম হল না, এখন আমি পাক্কা দেড় মাসের হয়ে গেছি। এই আমার তৃতীয় স্টেটাস।
সত্যি বলতে কি, মন টন ভালো নেই। খসখসে ভালো লোকটা কোথায় যেন চলে গেছে, আর দেখতে পাই না। সেই সুযোগে গোলমুখো মহিলা আমাকে যা অত্যাচার করছে তার সীমা নেই। অবশ্য সন্ধ্যেবেলা অনেকখন ধরে গানটান শোনায়, ছড়াটড়া বলে। সেটা ভালোই লাগে। কিন্তু একটু ঘুমিয়ে পড়েছি কি পড়িনি, ওমনি কোল থেকে খাটে শুইয়ে দেয়। নিশ্চিন্তে একটু ঘুমোনোর যো নেই। এই যে কোলের মধ্যে নরমে গরমে একটু ঘুমু করব, ব্যাস, ফুড়ুত ফুড়ুত নাক ডাকা শুরু করতে না করতে ঠান্ডা খাটে নামিয়ে দিয়েছে।

তারমধ্যে আবার বাঁ হাতে বিসিজির ফোঁড়া হয়ে টনটন করছিল। ডাক্কাবাবু নামে বাজে লোকটা বেথায় ওষুধ দিতে না করে দিয়েছে। তাই একদিন আমি সারাদিন কেঁদেছি আর চেঁচিয়েছি। এখন অবশ্য সেরে গেছে। এত দুঃখের মধ্যেও আশার আলো হল ডুডিবোতলগুলো আর মিট্টি ওষুধ। তবে এতেও শেষ না, এখন আবার দুটো পচা ওষুধ এসে গেছে। একটা নাক বন্ধ হলেই গোলমুখো নাকে ঢেলে দিচ্ছে, আর পেতুবেথা হলে অন্যটা, ওটা কি যে অখাদ্য খেতে কি আর বলব। আমি তো তালে থাকি, গোলমুখো একটু অন্যমনস্ক হলেই জিভ দিয়ে ঠেলে ফেলে দেব। আর অন্যমনস্ক করার জন্য প্রাণপণে চিৎকার করি, তবু সে ঠিক ওষুধ খাইয়ে দেয়। তখন আমি আরো চেঁচাই, কিন্তু লজ্জার ব্যাপার হল পেতুবেথা সেরে যায়, আর আমি কেন জানি না আরামের চোটে ঘুমিয়ে পড়ি, আর প্রতিবাদ শেষ করার সময় পাই না।
কাল রাতে যে ঘটনাটা ঘটল সেটা বলি। আমি কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি, তাই যথারীতি আমাকে খাটে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝরাতে একটু খিদে খিদে পাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি যে গোলমুখো ঝপাঝপ ডুডি বানাতে লেগে গেছে, এমনি সময় হঠাত গরম গরম নরম নরম । আমি তো হাই টাই তুলে আবার ঘুমিয়ে পড়েছি। ও মা, দুই মিনিট যেতে না যেতে, গোলমুখো আমাকে তুলে বলে, আমি নাকি পটি করেছি। ওটা নাকি কোল নয়, পটি। আমি প্রাণপণে চেঁচিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তারপর দেখি কোলে তো নিচ্ছেই না, পটি পরিষ্কার করছে শুধু, এদিকে খিদেতে প্রাণ অস্থির। সাঙ্ঘাতিক বিরক্ত হয়ে রাগী চোখে তাকালাম, এই মহিলা আমাকে নিজের মা বলে কি করে? আরে, আমি যে খিদেতে চেঁচাচ্ছি, সেটা একটা দেড় মাসের বাচ্চাও বুঝতে পারে, তুমি পারো না? পটি পরিষ্কার হল, নতুন ন্যাপি পরানো হল, তারপর নাকে ওষুধ, কি মুশকিল রে বাপ। খেতে দিবি কখন? তারপর তিনি কোলে নিলেন, তারপর বিব খুঁজলেন তিন মিনিট, ( কিচ্ছু গুছিয়ে রাখে না মেয়েটা) তারপর ডুডি বোতল এলো। আহ... এইবার মহিলাকে মা মা মনে হচ্ছে বটে। ডুডি খাওয়া শেষ, আমি মুখ টুখ মুছে একটা এপ্রিসিয়েশন স্মাইল দিয়ে দিলাম, নাহ, মাম্মা লোকটা অত খারাপও না। মাম্মা দেরি করার জন্য দুবার সরি বলল, গুডনাইট কিসি করল, আমি কোলের মধ্যে পিজ্জার চিজের মত গলে গেলাম , তাপ্পর আবার ফুড়ুত ফুড়ুত নাক ডেকে ঘুমু।
আনন্দ সংবাদ আনন্দ সংবাদ আনন্দ সংবাদ, বাবা এক মাসের ছুটি নিয়ে আর তিন দিন পরে এসে পৌঁছচ্ছে। আমি আনন্দের চোটে খাটেই ঘুমিয়ে পড়ছি কাল থেকে, কোলে না নিলে চেঁচাচ্ছিও না। সারাক্ষণ হ্যাপি হ্যাপি গুবগুবে মুখ করে আছি, চাই কি মাঝে মাঝে গালে টোল ফেলে হেসেও ফেলছি। ডুডিটাইম এসে গেছে, তাই এখন যেতে হচ্ছে, আবার পরে লিখব, অনেক কথা জমে আছে।

Comments