সরকারী চাকরী ইস্কুল

বুইলেন কি না, একবার মাথা খারাপ হয়েসিল তাই সরকারী চাকরী পাওয়ার শখ হয়েসিল। তাই কল্লাম কি, চালডাল ইস্কুলে ভত্তি হয়ে গেলাম। বুইলেন না? চাল গো চাল, মানে হল গে রাইস। তা তেনারা বললেন কি করব্যা? ব্যাঙ্ক না পোস্টাপিস না ইস্কুল না ইন্স্যুরেন্স? বল্লুম, কি জানি বাপু, সরকারি চাকরি করব। হেই দেখেন মোর কাগজ, হেই দেখেন মোর কম্পুটার জানার পোমান। তো তাঁরা বললেন সোজা হাজার কুড়ি টাকা নে ভত্তি হয়ে যা। মা কে বল্লুম , দেবে মা? কি যেন একটা এলাইসি না কি ভাটের ম্যাচিওর করেছিল, তার থেকে টাকা পইসা নিয়ে গেনু। তো তারা বললে, এমন হবেনি, ড্রাফট করে আনো। তাও আবার এসবিয়াই থে। ড্রাফট কত্তে হল বেলা, হাজির রোল তাই দুপুর বেলা, খেয়েদেয়ে আবার গেনু আপিসে।

একটা কাগসে নামধাম লিখে নীল নীল কালিতে পেইড ছাপ্পা মেরে বললে এই তো ভত্তি হয়ে গেস, যাও বইখাতা নাও। বাপরে, পাঁচ কেজি বইখাতা দিলে, সাথে লাইব্রেরি কাড, হ্যান ম্যাগাজিন, ত্যান নিউজলেটার, সাথে একটা চালের বস্তা। মানে ব্যাগে লেখা ছিল রাইস, কিন্তু ওই ব্যাগে পাঁচকেজি বই খাতা ধর্বে না। নতুন বইখাতা আমার চিরকালই পোথম দুদিন হেবি লাগে। বাড়ি এসে হেবি উৎসাহ হল। পদ্দিন আবার ছুটে গেনু। একটা দশ ফুটের ঘরে কুড়িটা ঘেমো ঘেমো চেহারার ছেলেমেয়ে ঠাসাঠাসি করে চকচকে চোখে বসে আসে। পোথমে অঙ্ক ক্লাস, তাতে শেখানো হল কি করে চালাকি করে তারিখের অঙ্ক নিমেষে করে ফেলতে হয়। তাপ্পর ওই ক্লাসের বই থেকে হোম্বার্ক দেওয়া হল। পরের তিন পাতা ভত্তি অঙ্ক কালকে করে আনতে হবে। এরপর ইঞ্জেরি কেলাস, সেখানে পোচুর ইনজেরি শিখে ফেললাম, তাপ্পর আবার তিন পাতা হোম্বার্ক। তাপ্পর কম্পুটার, এট্টু আনন্দ হল, হেইডা এট্টু জানি। ও মা, কম্পুটারে বসা নেই, কিছু নেই, শুধু চাড্ডি থিওরি, আবার তিন পাতা হোম্বার্ক। তারপর সবথেকে বড় বিভীষিকা জেনারেল নলেজ। বাপরে বাপ, এ তো ফাঁকি মেরে লাভ নেই। এবার পাঁচ পাতা হোম্বাক, মানে ঝাড়া মুখস্ত কত্তে হবে। এইবার আমার ভ্যাক করে কান্না পেয়ে গেল, মুখস্তই যদি কত্তে পারব তাহলে আমার এত খারাপ রেজাল্ট হয় সারাজীবন?
তাপ্পর হেডস্যার এলেন, এসে বললেন, "ছাত্তছাত্তীগণ, পোথম দিন কেমন লাগল?" আমরা বল্লুম, "হেব্বি ছ্যার"। তিনি বুল্লেন - " খাটুনির কোন বিকল্প নেই, এইজন্যি তোমাদের অনেক অনেক হোম্বার্ক দেওয়া হইসে, কাল থেকে পোত্তেক কেলাসে পরীক্ষে হবে পোথম ১৫ মিনিট, তার পর আধঘন্টা পড়াশোনা। এতেও চাকরী পাবে তার গ্র্যান্টি নেইকো। অন্তত এক বছর সব পরীক্ষের ফর্ম ফিলাপ করবে, তারপর দেখবে একটাতেও পেলেনা। হাল ছাড়লে চলবে না, দ্বিতীয় বছর দেখতে পাবে অনেকগুলো প্রিলি কিলিয়ার করেছ, কিন্তু মেইন এ পাবেনি। তাতেও হাল ছাড়বে না, তৃতীয় বছর হয়ত এক আধটা মেইন কিলিয়ার করলে করতেও পার, না ও করতে পার। কিন্তু দেখ, তোমরা গ্র্যাজুয়েট। তাই গ্রুপ ডি পরীক্ষায় চাকরী পেলেও কোরো না কিন্তু। ভালো চাকরীর অপেক্ষা করো। আর মনে রেখো, খাটুনির কোন বিকল্প নেই।" ব্যাবাগো, পইসা দিয়ে এ কি গ্যাঁড়াকলে পড়লাম বাপু। এ তো পুরো গেছোদাদা কেস।
যাই হোক, তখন এমসিএ আর চালডালইস্কুল মিলিয়ে যা পড়াটাই করলাম, মাধ্যমিকে অত পড়লে আমার ফাস্টো হওয়া কেউ আটকাতে পারত না। তাপ্পর মাস চারেক বাদে, এক ব্যাঙ্কের কেরানীর পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখনু, কিস্যু পারলাম না। মানে, পারতাম, কিন্তু সময় ফুইরে গেল। মা কে এসে বলনু, "ও মা, আমার দ্বারা হবেনি।" মা বললে " এত টাকা নষ্ট কচ্চিস, সামনের বছর বে দিয়ে দেব।" মা কে বলনু, "আর কোন উপায় কি নেই?" বললে, "হয় পড়া কর, না হলে চাকরি কর"। ভাগ্যিস উইপ্রো ফোন করে আমায় তক্ষুনি চাকরি দিয়ে দিল। সরকারী চাকরি আর করা হলনি, বিয়েটাকেও তখনকার মত আটকানো গেল।

Comments