মহালয়া, আমার গম্পা আর ভোট
----------------------------------------
প্রথমেই বলি, আমার গম্পা মানে আমার দাদু, মায়ের বাবা। গম্পা ওই গ্র্যান্ডপার অপভ্রংশ আর কি। এবার বলি হ্যাঁ, তিনটের মধ্যে সম্পর্ক আছে।
দেবী দুর্গার অকাল বোধন সম্পর্কে কোন আইডিয়া আছে কি? যাঁদের নেই, তাঁদের জানাচ্ছি, রামচন্দ্র দেবীদুর্গার অকালবোধন করেছিলেন শরৎকালে। আদতে দেবীর পুজোর টাইম হল বসন্ত, যখন তিনি বাসন্তী নামে পূজিত হন। রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করতে যাবেন, হেবি তাড়া, তাই বসন্ত অবধি অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, তাই দেবীকে কাঁচা ঘুম থেকে জাগিয়ে অকালবোধন করেন। দেবীও মহা ইয়ে, তিনি রামের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একশ আটটি নীলপদ্মের মধ্যে একটি লুকিয়ে রাখেন। যখন রাম পুজো করতে শুরু করেন, তখন দেখেন একশ সাতটি নীলপদ্ম। কিন্তু তখন লেট হয়ে গেসে। তাই তিনি বললেন, “সকলে তো বলে আমার চোখ পদ্মের মত, তাহলে আমি বাণ দিয়ে আমার একটি চোখ খুবলে দেবীকে অর্পণ করি”। বলে বান তুলেছেন, তখন নাকি দেবী স্বয়ং আবির্ভুতা হয়ে হাত চেপে ধরেন। “বাছা তুমি কানা হলে যুদ্ধু করবে কি ভাবে?” মানে ঠিক এটাই নিশ্চয়ই বলেননি, কিন্তু এইরকমই কিছু বলেছেন। তাপ্পর বিজয়ী হওটও, আমাকে ঘুম থেকে তুলেছ, তবুও আমি রাগ করিনি, এইসব বলে ভ্যানিশ হলেন।
এতটা গল্প বলে গম্পা আমাকে বললেন, বাবা মা কোথায় গেছে জানো? আমি ( তখন সাড়ে তিন অথবা চার) বললাম, হ্যাঁ, ভোটের জন্য কাজ করতে গেছেন। বাবা পোলিং এজেন্ট হতেন, আর মা বাইরে পার্টির ক্যাম্পে বসতেন। ভোটের দিন এঁরা বিকেল অবধি থাকবেন না, জানা ব্যাপার ছিল। আমিও সেই জন্ম থেকেই ভোট দি আর কি। মানে বিভিন্ন পার্টি থেকে যে রুম, দাগ, নম্বর লেখা কাগজগুলো দেয়। সেগুলোর পার্টি খন্ডটা ছিঁড়ে ফেলা হয়। সেগুলো আমি ভোট দিই। সবাই একটা ভোট দেয়, আমি চারটে দিতাম। দুটো মা বাবার, দুটো গম্পা বিবির। তবে দুঃখ একটাই, আমাকে একা একা বাক্সে ফেলতে দিত না, আর ওই খুপরিতে কেউ নিয়ে যেত না। আমাকে আমার ভোটদের কোন একজন ভোটের কাকুকে দিতে হত। আমি ভোট দিতে যেতাম ফাঁকায়, দুপুরের দিকে, গম্পা বিবির সাথে। মা সাথে খেতে ফিরতেন অনেক সময়ে।
গম্পা আমাকে বললেন, দুর্গার অকালবোধনের সময় হনুমান রামচন্দ্রকে কি বলেছিলেন জানো?
পদ্মআঁখি আজ্ঞা দিলে
পদ্মবনে আমি যাব
আনিয়া নীলপদ্ম
শ্রীচরনপদ্মে দিব।
তারপর আমার মত বেচারাকে খচানোর জন্য বললেন, “আমি কেন জানি বলতো, আমি বিজেপি, আর পদ্ম বিজেপির সিম্বল”।
ব্যাস, আমার মধ্যেকার চিরন্তন সিপিয়েম ডাক ছাড়তে লাগল, আমি কি এত সহজে হেরে যাওয়ার পাবলিক? মা বাবা নেই তো কি হয়েছে? আমি বীরদর্পে বললাম, আমিও একটা কবিতা জানি,
কাস্তেআঁখি আজ্ঞা দিলে
কাস্তেবনে আমি যাব
আনিয়া নীলকাস্তে
শ্রীচরণকাস্তে দিব।
তারপর থেকে যতবার গম্পা এই কবিতা বলেছে, আম্মো উত্তর দিয়েছি।
ডিসক্লেইমারঃ এই গদ্যটি বেরসিকদের জন্য নয়, চাড্ডিদের জন্য তো নয়ই। সরল জিনিস বুঝলে ভালো, না বুঝলে যেকোনো বাজে কমেন্ট ডিলিট হবে। গম্পার ব্যাপারে আমি খুব সেনজেটিভ কিন্তু।
----------------------------------------
প্রথমেই বলি, আমার গম্পা মানে আমার দাদু, মায়ের বাবা। গম্পা ওই গ্র্যান্ডপার অপভ্রংশ আর কি। এবার বলি হ্যাঁ, তিনটের মধ্যে সম্পর্ক আছে।
দেবী দুর্গার অকাল বোধন সম্পর্কে কোন আইডিয়া আছে কি? যাঁদের নেই, তাঁদের জানাচ্ছি, রামচন্দ্র দেবীদুর্গার অকালবোধন করেছিলেন শরৎকালে। আদতে দেবীর পুজোর টাইম হল বসন্ত, যখন তিনি বাসন্তী নামে পূজিত হন। রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করতে যাবেন, হেবি তাড়া, তাই বসন্ত অবধি অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, তাই দেবীকে কাঁচা ঘুম থেকে জাগিয়ে অকালবোধন করেন। দেবীও মহা ইয়ে, তিনি রামের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একশ আটটি নীলপদ্মের মধ্যে একটি লুকিয়ে রাখেন। যখন রাম পুজো করতে শুরু করেন, তখন দেখেন একশ সাতটি নীলপদ্ম। কিন্তু তখন লেট হয়ে গেসে। তাই তিনি বললেন, “সকলে তো বলে আমার চোখ পদ্মের মত, তাহলে আমি বাণ দিয়ে আমার একটি চোখ খুবলে দেবীকে অর্পণ করি”। বলে বান তুলেছেন, তখন নাকি দেবী স্বয়ং আবির্ভুতা হয়ে হাত চেপে ধরেন। “বাছা তুমি কানা হলে যুদ্ধু করবে কি ভাবে?” মানে ঠিক এটাই নিশ্চয়ই বলেননি, কিন্তু এইরকমই কিছু বলেছেন। তাপ্পর বিজয়ী হওটও, আমাকে ঘুম থেকে তুলেছ, তবুও আমি রাগ করিনি, এইসব বলে ভ্যানিশ হলেন।
এতটা গল্প বলে গম্পা আমাকে বললেন, বাবা মা কোথায় গেছে জানো? আমি ( তখন সাড়ে তিন অথবা চার) বললাম, হ্যাঁ, ভোটের জন্য কাজ করতে গেছেন। বাবা পোলিং এজেন্ট হতেন, আর মা বাইরে পার্টির ক্যাম্পে বসতেন। ভোটের দিন এঁরা বিকেল অবধি থাকবেন না, জানা ব্যাপার ছিল। আমিও সেই জন্ম থেকেই ভোট দি আর কি। মানে বিভিন্ন পার্টি থেকে যে রুম, দাগ, নম্বর লেখা কাগজগুলো দেয়। সেগুলোর পার্টি খন্ডটা ছিঁড়ে ফেলা হয়। সেগুলো আমি ভোট দিই। সবাই একটা ভোট দেয়, আমি চারটে দিতাম। দুটো মা বাবার, দুটো গম্পা বিবির। তবে দুঃখ একটাই, আমাকে একা একা বাক্সে ফেলতে দিত না, আর ওই খুপরিতে কেউ নিয়ে যেত না। আমাকে আমার ভোটদের কোন একজন ভোটের কাকুকে দিতে হত। আমি ভোট দিতে যেতাম ফাঁকায়, দুপুরের দিকে, গম্পা বিবির সাথে। মা সাথে খেতে ফিরতেন অনেক সময়ে।
গম্পা আমাকে বললেন, দুর্গার অকালবোধনের সময় হনুমান রামচন্দ্রকে কি বলেছিলেন জানো?
পদ্মআঁখি আজ্ঞা দিলে
পদ্মবনে আমি যাব
আনিয়া নীলপদ্ম
শ্রীচরনপদ্মে দিব।
তারপর আমার মত বেচারাকে খচানোর জন্য বললেন, “আমি কেন জানি বলতো, আমি বিজেপি, আর পদ্ম বিজেপির সিম্বল”।
ব্যাস, আমার মধ্যেকার চিরন্তন সিপিয়েম ডাক ছাড়তে লাগল, আমি কি এত সহজে হেরে যাওয়ার পাবলিক? মা বাবা নেই তো কি হয়েছে? আমি বীরদর্পে বললাম, আমিও একটা কবিতা জানি,
কাস্তেআঁখি আজ্ঞা দিলে
কাস্তেবনে আমি যাব
আনিয়া নীলকাস্তে
শ্রীচরণকাস্তে দিব।
তারপর থেকে যতবার গম্পা এই কবিতা বলেছে, আম্মো উত্তর দিয়েছি।
ডিসক্লেইমারঃ এই গদ্যটি বেরসিকদের জন্য নয়, চাড্ডিদের জন্য তো নয়ই। সরল জিনিস বুঝলে ভালো, না বুঝলে যেকোনো বাজে কমেন্ট ডিলিট হবে। গম্পার ব্যাপারে আমি খুব সেনজেটিভ কিন্তু।
Comments
Post a Comment