পাজী বোবো

এই হয়েছে এক জ্বালা। সারাক্ষণ যখন সে সারা খাটে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায় আর খালি পড়ে যাওয়ার ভয়ে ধর ধর করে পিছনে পিছনে ঘুরি। মাঝরাতে গভীর ঘুম থেকে উঠে ডুডি গুলে খাওয়াই তারপর নিজের ঘুম আসতে চায় না। সে তো কাদা।
ভোরের দিকে সলিডুম্বা ঘুমটা এলে, তখনই তার ন্যাপি পালটাতে হবে। রাতে কোমর ধরে গেলে যদি উল্টদিকে ফিরে শুয়েছি, তাহলে একটু পরেই পিঠের নীচে নাক। ব্যাস ওপাশ ফেরার উপায় নেই। খাটের দুইধারে ঝুলি তার বাবা আর আমি। মাঝে সে ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরে চলেন।
দেয়াল বা খাটের রেলিং বেয়ে উঠতে হবেই তাকে। তারপর দুম করে মাথা ঠুকবে, থুতনি ঠুকবে, দড়াম করে পড়বে। মিনিটখানেক কাঁদবে, কোলে নিতে হবে। তারপরেই সব ভুলে আবার রেলিং বাওয়া শুরু।
চশমা নিতেই হবে তাকে।চল্লিশবার বকুনি খায়। বড়বড় চোখ দেখে চোখ নামিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে। কিন্তু ওতে ভুললে হবে না। সেয়ানা কান্না। মাঝেমাঝে চোখ তুলে দেখে মা একটুও কি গলে গেছে? না আরেকটু কাঁদব?
কাল সন্ধ্যায় ডুডি না খেয়ে সারা খাটে হুড়ুদ্দুম করে বেড়াচ্ছে। লাস্টে খচমচ করে নাইটি ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে চশমায় টান। ধমক, এঁ এঁ এঁ। আবার টান। এবার বকুনি।
ঠোঁট কাঁপিয়ে কান্না, তারপর টুক করে একবার তাকালো। এখনো গম্ভীর মুখ। এবার একটু পটানোর চেষ্টা মধুর হেসে। এই রে, তাতেও হাসছে না। তারপর নিজে নিজেই সদ্য শেখা ঝিক্কিঝিকিম নাচ, তাইতাই, টাটা সব দেখানো হল। এতেও কাজ হচ্ছে না? এইবার ব্রহ্মাস্ত্র।
সোজা কোলে উঠে শুয়ে পড়ল, তারপর ডুডি বোতলের ঢাকা টানাটানি করে খুলে ফেলে মুখে পোরার চেষ্টা।
এই তো ভালো ছেলে হয়েছি মাম্মা, দেখ, নিজে নিজে ডুডি খেয়ে ফেলছি। এবার একটু হাসো, প্লিজ।
এই হয়েছে জ্বালা বুঝলেন তো। একবার মনে হয় কবে একা একা ঘুমোবে ব্যাটা। একবার মনে হয়, এই তো আর কদিন পরেই বড় হয়ে যাবে। কোথায় পড়াশোনা করতে যাবে কে জানে?
দুইবারেই মায়ের চোখ ভাসে।

Comments