অমৃতা

আমার মতো, যারা একটু ন্যাদোশ আছি, তাদের বন্ধু জোটানো কঠিন। সেই ইস্কুলেই ভালোকরে জোটাতে আর মেন্টেন করতে পারিনি তো আর পরে। স্কুলের বন্ধুগুলোর কচিকচি মুখ এখনো চোখের সামনে ভাসে, হয়তো বড়বেলায় তাদের সাথে যোগাযোগ আছে, কিন্তু তবু, সেই ফ্লাইং ডিস্ক এসে আমার চশমা ভেঙ্গে ফেলার পর পৌলমীর মুখ, বঙ্কিমী সাহিত্যের পাকা আলোচনা সেরে, "তুই ভাই কুন্দনন্দিনী আমি ভাই প্রফুল্ল", সেইসব ইয়েপাকা কথা বলা কস্তুরীর মুখ, বাসে বসে হাহাহিহি করা শ্রেষ্ঠা, মৈত্রেয়ী, পৌলমীসাহার মুখ, একবার "শালা" বলে ফেলার অপরাধে সাতদিন কথা না বলা ভালোমেয়ে প্রজ্ঞার গালফোলা মুখ, "উফ তুই বড্ড জ্বালাস" বলা সৃজিতার মুখ, এই মুখগুলো মনে ফুটে ওঠে সর্বদা।

ফেসবুকে হোয়াটসআপএ, ফোনে যোগাযোগ থাকে, এখন খচাখচ ছবি তোলার যুগ, কাজেই কার কচিছানা কি দুষ্টু করল, কে পুজোয় কি কি কিনল, ড্রেস না শাড়ি, সব ছবি ফোনের নাগালে। কিন্তু তবু সেই টুলটুলে মুখগুলোকেই স্বপ্নে দেখতে পাই, এমনকি কস্তুরীকে স্বপ্নে খিস্তি করার সময়, এখনকার শাড়ীপরা বাংলাটিচারকে দেখতে পাই না, সেই ত্রয়োদশবর্ষিয়া খ্যাংরাকাঠিকেই দেখি।
গতকাল রাত্রে এক দুঃসংবাদ পেয়েছি, বেশ কিছুদিন আগে, আমাদেরই সহপাঠিনী অমৃতা ব্যানার্জী ( রেড হাউজের) আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তার শিশুটি জন্মগ্রহণ করার তিন দিনের মাথায় তার ব্রেইনস্ট্রোক হয়, এইটুকুই খবর পেয়েছি, তাও বেশ কয়েকমাস আগের ঘটনা।
কত বছর যোগাযোগ নেই, মনে আছে সেই ছোটবেলার মুখ। কিন্তু ঘটনাটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এত তাড়াতাড়ি? সন্তান হওয়ার আনন্দটা ভোগ করতে পেলো না মেয়েটা?
গতকাল সারারাত জেগে আছি, আজ প্রতিমুহুর্তে মনে ভেসে উঠছে ইস্কুলের লাখো লাখো ঘটনা।
কিছু আর বলার নেই, শুধু বাকি বন্ধুগণকে অনুরোধ, দয়া করে সুস্থ থাকো, বেঁচে থাকো, সাবধানে থাকো, প্লিজ, আমার আগে যেও না।

Comments