আটিট্যুড

আজকে দুই তিনজন আমার প্রশংসা করে ফেলেছে, তাই স্বাভাবিক ভাবেই কয়েকটা তেতো জিনিস মনে পড়ে গেল।
ছোটবেলা থেকেই প্রায় আমার বন্ধুবর্গের একটা বড় অংশ ছেলেরা। চিরকাল গার্লস স্কুল আর গার্লস কলেজে পড়ার সুবাদে ছেলেরা খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। তবু কিছু সাংঘাতিক “ছেলে ছেলে” স্বভাব থাকায় ছেলেরা সহজেই আমার বন্ধু হত। যেমন আমি যে সময়ে গেম খেলতাম বা চ্যাট করতাম, কম্পু নিয়ে নিরলস বকে যেতাম, সেই সময়ে মেয়েরা অত করত না। আমি কেন করতাম? সিম্পল, আমার সময় ছিল, আর বন্ধুর অভাব ছিল। আমি সেইজন্য প্রচুর গল্পের বই পড়েছি, গেম খেলেছি। একবার কম্পু দুম হয়ে গেল, সে আর কিছুতেই চলে না, কি যন্ত্রণা রে বাবা। গল্লাকে ফোন করলাম, উইন্ডোজের সিডি নিয়ে এলাম, নিজে নিজে ইন্সট্রাকশন পড়ে কম্পু ফরম্যাট করে ফেললাম। নাহ, নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছি না, নিজের কত ফাঁকা সময় ছিল আর কত বন্ধুবান্ধব কম ছিল সেই বলছি আর কি।


বন্ধুরা বেশিরভাগ ছেলে ছিল আর আমি হেবি রোম্যান্টিক ছিলুম বলে প্রচুরবার প্রেমেও পড়েছি, আর অগুনতিবার ফ্রেন্ডজোনও হয়েছি। বাবি হল একমাত্র বন্ধু যে ফ্রেন্ডজোন করেনি, কুমতলব ছিল বলে। ছেলেদের সাথে মেশার অনেক কুফল(?) আছে। প্রথমত বাজে জোকের মানে বুঝতে পারা। যে জোকে সব ভালো মেয়েরা গম্ভীর থাকে সেখানে আমি হেসে কুটিপাটি। কি চব্য।
তাপ্পর গালি তো আছেই। গালির মানে বোঝা আরেক চব্য। কচাই আর প্রজ্ঞা ছাড়া বইপড়া পাবলিক মেয়েদের মধ্যে বিশেষ কেউ ছিল না। এদিকে গল্লা বই পড়ে উলটে গেছে। পরে নির্জন সেনকেও দেখলুম। এঁদের সুবিধা হচ্ছে আমার পড়া বইগুলো পড়ে এরাও বড় হয়েছেন। ফলে বইতুতো ইয়ার্কি খুব বোঝে। কি সুবিধা এঁদের সাথে কথা বলে। আমার কত্তা (যিনি এককালে এবং এখনো বন্ধু) এই দলেরই লোক।
সেন্স অফ হিউমর সত্যি বলতে ছেলেদের থেকেই শিখেছি, আর উল্টোপাল্টা কথা নির্ভয়ে বলতেও, একমাত্র এরাই জাজ করেনি, শেখায়নি যে মেয়েদের এইরকম হ্যা হ্যা করা ঠিক না। আর সেন্স অফ হিউমর? রামোঃ। মেয়েরা এইসব সামান্য জিনিস একদম পছন্দ করত না, অন্তত আমাদের সময়ে। মানে কি সব পার্সোনালিটি সবার। আরে টপিক হো তো নেলপলিশ হো, শাড়ি হো। বই পড়া আবার টপিক নাকি? ( আমি সবার কথা বলছি না, কিন্তু অনেকেই) আর ঋতুপর্ণা তো ছেলেঘেঁষা পাবলিক, এত বাজে দেখতে যে ছেলেরাও প্রেমে পড়ার কথা ভুলেও ভাবে না। ছেলেদের বদ বদ জোকেও মানে বুঝে হাসে, এইসা বদ মেয়ে। কালে কালে এমন হল, আমি মুখই খুলতাম না, ঝাড়ের ভয়ে। ভাই সোজা বকুনি বা সার্কাজমকে আমি যমের মত ভয় পাই।
একাধিক বন্ধুপত্নী বা বন্ধুগার্লফ্রেন্ডের অসুবিধা ছিল আমাকে নিয়ে, ও আবার এখানে কেন? ছেলেদের আড্ডায়? আমি না হয় বিবাহিত স্ত্রী, বা হবু বিবাহিত গার্লফ্রেন্ড। এ সিঙ্গল এবং হ্যা হ্যা পার্টি। আমার বরের সাথে ফস্টিনষ্টির তালে নেই তো? অনেক বন্ধুর সাথে দুরত্ব বা বন্ধুবিচ্ছেদ হয়ে গেছে এই নিয়ে। আমার যখন বিয়ে হল, একাধিকজন শান্তির নিশ্বাস ফেলেছেন শুনেছি। নাহ, তাঁরা ছেলে নন, তবে চিন্তায় ছিলেন তাঁদের বর বা ভাইকে নিয়ে। এ কেমন মেয়ে? আড্ডা মারতে ষোল আনা রাজি, কিন্তু থিতু হতে না।
নাহ, আমি শুধু মেয়েদের গাল দেওয়ার জন্য এই পোস্ট লিখছি না, এরকম অনেক ছেলেও আছে যারা আমাকে ভদ্র হতে বলেছে। ভাগ্যিস ফেসবুক ছিল। তাই আমি জানলাম যে আমার লেখা ভালোই লাগে অনেকের। ছ্যাবলামি না, অসভ্যতা না, ভালো লাগে। তাই আজও কেউ ভালোমনে ভালোলাগার কথা বললেও আমার সেই হাজার হাজার দুঃখের দিন মনে পড়ে যেদিন আমি একা একা কান্নাকাটি করেছি মনে আঘাত লাগায়। সেই আঘাত এসেছে মনের খুবই নিকটজনের কাছ থেকে। বন্ধু বা বন্ধুপত্নী কেউ।

Comments