জীবনের মণিমুক্তো - পর্ব ১


নতুন সিরিজ, এটাও নিশ্চয়ই শেষ হবে না। আমার অভ্যাসমতো।
আমার বিবি(দিদা) শয্যাশায়ী। শরীর ভালো নেই, একগাদা ঝামেলা। আর আশি বিরাশি বয়স হয়েছে, হাইপ্রেশার ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে বিবি যখন বাচ্চাবিবি ছিল, মানে আমিও ছিলাম, তখন কয়েকটা দারুণ গল্প শুনেছিলাম। বেশিরভাগই বহরমপুরের, ওঁর বাপের বাড়ির। তাই তার কিছু এখানে বলে নিচ্ছি। এই সিরিজে বেশিরভাগই বাড়ির বিভিন্ন বড়দের বা আমার বন্ধুদের জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ঘটিত মজার ঘটনা থাকবে। প্রশ্ন হল, আমি কি দুঃখের কথা লিখতে পারি না? নিশ্চয়ই পারি, কিন্তু পৃথিবীতে এত দুঃখ আছে, আর বাড়িয়ে কি লাভ? তা ছাড়া দুঃখের কথা মনেও থাকে না আমার বেশি। মজারগুলো যেমন থাকে। এর জন্য সম্পুর্ণ দায়ী হলেন লীলা মজুমদার। ইচ্ছে হলে প্ল্যানচেটে ওঁকে ডেকে বকুনি দিন। যদি না উনি কোথাও জন্মে গিয়ে থাকেন এতদিনে। আমাকে বলে লাভ নেই।  তাহলে শুরু করা যাক-
বহরমপুরে বিবির পাশেই কোন একটা বাড়িতে একটি পরিবার থাকত, যাদের জীবনে তাড়া ছিল না কোন। তারা কথাও ঢিমে তেতালায় বলত।  বেসিক্যালি বহরমপুরের কথা একটু রাফ মত। তো 

একদিন সেই বাড়ির এক ছোট মেয়ে কাঁদছে, তার বাবার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে,
- সুমা কাঁদছে কেনে? (সোমা)
-ওর খিদে নেগেছে। ( খুকীর মা, উত্তর কলকাতা থেকে যাওয়া, ভয়ানক সফিস্টিকেটেড)
-খিদে পেয়েছে তো খেতে দিচ্ছ না কেনে? (বাবা, রাফ) 
- আজ ময়দা হবে। (মানে লুচি)
- ওহ, ময়দা হবে? (বাবাও আনন্দে মিইয়ে গেলেন)
এত সুচীবাই ছিল বাড়িশুদ্ধু সকলের যে গামছা পরে নর্দমার ধারে খেতে বসতেন সবাই।
একবার বহরমপুরে মাঝরাতে ভুমিকম্প হচ্ছে। সবাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। সেই বাড়িটির কত্তার মা, তার অনুঢ়া ছোট মেয়েটিকে নিয়ে তিনতলার ঘরে শুতেন। বুড়ি মানুষ, তায় কানে কম শোনেন।
এদিকে ভুমিকম্প হচ্ছে, সবাই তাড়া করছে, এঁদের তো জীবনে তাড়া নেই। বুড়ি অকাতরে ঘুমোচ্ছেন। মেয়ে ডাকছে
- মা, মা, ভু-মি-ক-ম-প হচ্ছে। ( মনে মনে যত দেরী করে সম্ভব পড়ুন)
অন্তত একশ বার ডাকার এবং ঠেলার পর মায়ের চোখ খুলল। তিনি বললেন,
- কি বলছিস লা খুকী? পেসাদ খাব?

Comments