মুষ্টিভিক্ষা

(একটি জাতকের কাহিনীর পুনর্লিখন)

পরিবারের আদরের একমাত্র চোখের মণি মেয়েটির গ্যাংরেপ হয়েছে। চারদিকে ছিছিকার পড়ে গেছে। সবাই যা করে থাকে মেয়েটিকেই দোষারোপ করছে। রেপ হয়েছে শুধু না, তারপর বেঁচে গেছে এবং পুলিশে কমপ্লেন করেছে আবার। কত সাহস। ওর জন্য পাড়ার উঠতি মাস্তান সোনার চাঁদ কয়েকজন বাধ্য হয়ে বেপাত্তা হয়েছে। তাদের মায়েদের তো ছাড়, পুরো পাড়ার সবাই ছি ছি করছে। আরে তুই নিশ্চয়ই ইশারা করেছিলি না হলে এরকম হয়? জিন্স পরে বেহায়ার মত ছেলেদের সামনে দিয়ে পড়তে যেত, উঠতি বয়সের ছেলেদের চোখের সামনে এলে ওদের আর কি দোষ? আরে ওদের উত্তেজিত করা হয়েছিল। আর ওই দলের নেতা বিকাশ যখন হাত ধরেছিল, তাকে গালি দিয়েছিল বন্ধুদের সামনেই। তার একটা মান সম্মান নেই? সবার সামনে গাল দেবে? সুন্দরী হলেই এত অহংকার? নে এবার ঠ্যালা বোঝ। আরে বাচ্চা কাচ্চা হলেও কে আসল বাপ বুঝতে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া গতি নেই।


এইসব আলোচনা হচ্ছিল পাড়ার সৎসঙ্গে। আগামীকাল গুরুদেবের আসার কথা। তিনি আবার পাড়ার অনেকেরই গুরুদেব। অদ্ভুত মানুষ। সবাই এত যত্নআত্তি করতে চায় কিন্তু তিনি কিছুই নেন না। শুনেছি এক কালে তাঁর বিয়েও হয়েছিল, এক সন্তানের পিতাও, খুব বড় বংশের ছেলে। সম্পত্তি প্রতিপত্তি সব ছেড়েছেন, এমনকি স্ত্রী আর সন্তানকেও দীক্ষা দিয়ে সন্ন্যাসী করেছেন। কিন্তু এদিকে পাড়ার কেউ এই কথা বললেই তিনি বলেন সংসারে থেকেও কিছু নিয়ম পালন করলেই শুদ্ধভাবে থাকা যায়, তার জন্য দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাসী হতে হবে না। ওঁর শিষ্যসংখ্যা বেড়েই চলেছে।
পরদিন গুরুদেব আসার সামান্য পরেই দেখা গেল সেই পরিবারের গিন্নী সেই মেয়েটির মা কে। গুরুদেবের কাছে আঁচল পেতে তিনি চাইলেন " আমার মেয়েকে সুস্থ করে দাও বাবা, আবার আগের মত করে দাও। ওর যেনো বিয়ে দিতে পারি। পড়াশোনা আর করতে পাঠাব না। এই লজ্জা আর চারদিকের এত নিন্দেমন্দ থেকে ছুটি দাও বাবা। আমরা পুলিশ কমপ্লেনও তুলে নেব। মেয়ে জেদ ধরে বলেছিল বলে বাবা আর জেঠু নিয়ে গেল থানায়। আমি অনেক মানা করেছিলাম, কেউ শোনেনি। আমাকেও সাথে যেতে হল, একজন মেয়ে তো লাগবে যেতে। "
সব শুনে গুরুদেব খানিক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেন। বিকাশের মা তাঁর সবথেকে বড় ভক্ত। গিন্নীর কথা শুনে প্রথমে মুখ ব্যাঁকালেন তারপর তাঁর ছেলের বাঁচার চান্স আছে জেনে বসেই ছিলেন উঠে চলে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও।
খানিক্ষণ পর গুরুদেব চোখ খুললেন, সবাই দেখল তাঁর চোখে জল। তিনি বললেন " মেয়েটির উপর এতো অত্যাচার হয়েছে, আর তোমরা তাকেই দোষ দিচ্ছ?" সবাই চুপ। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, এর প্রতিকার মাত্র এক মুঠো সর্ষে। গিন্নীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মাত্র এক মুঠো সর্ষেতেই সমাধান হয়ে যাবে বাবা?
-হ্যাঁ তবে সেই সর্ষে ভিক্ষা করবে সেই পরিবার থেকে যে পরিবারে মেয়ে আছে এবং ট্রামে, বাসে, অটোতে, আত্মীয়ের কাছে বা বন্ধুদের কাছে একবারো শারীরিকভাবে অপমানিত হয়নি।
সবাই চুপ।
পাওয়া যায়নি।

Comments