হোমমেড ফুচকা

ফুচকার খোলসঃ
----------------------

আমি সাধারণত এটি বাইরে থেকে কিনি। হায়দ্রাবাদে আশি টাকায় দুশোটা ফুচকার প্যাকেট পাওয়া যায়। ইয়াপ্পিগুল্লুস। কিন্তু অনেকে নিজে বানাতে চান, তাই আমি সেটা বানানোর বিধিও দিলাম।

উপকরণঃ
চল্লিশটা ফুচুর জন্য
১ কাপ সুজি
১/২ চা চামচ নুন
১ টেবিলচামচ ময়দা
১/৪ কাপ উষ্ণ জল
ভাজার জন্য তেল


১. প্রথমে উষ্ণ জলে সুজি আর নুন দিয়ে ততক্ষণ মাখুন যতক্ষণ সুজি পুরো জল টেনে নেয়। বেশ একটা মাখো মাখো চেহারা হবে।
২. এরপর এক চামচ ময়দা মিশিয়ে বেশ মোলায়েম মত মেখে ফেলুন। ইচ্ছে করলেও আর ময়দা মেশাবেন না। প্রচুর মাখতে হবে কিন্তু।
৩. এবার পুরো দশ মিনিট ধরে মাখুন। এতে কিন্তু মাখাবস্তুটির টেক্সচার পালটাবে। ফাঁকি মারবেন না, পুরো দশ মিনিট লাগবে। বাটির বদলে খোলা যায়গায় যেমন রান্নাঘরের প্ল্যাটফর্ম বা টেবিলে মাখলে ভালো হবে।
৪. এক টেবিলচামচ তেল দিন এবার ওই মাখাতে। মনে রাখবেন ১০ মিনিট মাখার পর তেল দিতে হবে, আগে না। তেল মিশিয়ে আবার তিন মিনিট মাখুন।
৫. মাখাটি নরম হবে না, আবার শক্তও না, মাঝামাঝি একটা শক্ত মতো হবে। হয়েছে? তাহলে একটা বাটি চাপা দিয়ে অন্ততপক্ষে তিরিশ মিনিট ওকে গায়ের ব্যাথা মরবার সময় দিন।
৬. মাখাটি সমান তিন ভাগে ভাগ করে নিন, এবার পাতলা করে বেলে নিন। একটা গ্লাস বা বাটি দিয়ে গোল গোল করে কেটে নিন। এবার কাটা পিসকে আরেকটু বেলে ধারগুলো মোলায়েম করে নিন। এই ফুচুর বেলুন্তির মোটাত্ব পুরোপুরি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতি। আমি বোঝাতে পারব না, আপনারাও বুঝতে পারবেন না।
৭. এবার তেল গরম করে একটা একটা করে ভেজে ফেলুন, পেটমোটা হলে আর সোনালী হলে ভাজা হয়ে গেছে ধরে নিন। নামিয়ে ফেলুন। টিস্যু পেপারে নামাবেন, অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে। সবই লো বা মিডিয়াম ফ্লেমে ভাজা হবে।
হয়ে গেছে? এবার ঠান্ডা করে এয়ারটাইট কৌটোয় রেখে দিন।
হেব্বি মাখামাখি করে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে, গেছে তো? এইজন্যেই বলি বাইরে থেকে আনুন। মাত্র চল্লিশটা ফুচুর জন্য এতো খাটনি পোষায়?

মুদী মশলা
*************
এবার একটি বিখ্যাত মশলা শিখব। এই মশলার নাম নাকি মুদী মশলা। না মোদী না, সবকিছুতে পোধানমন্ত্রীকে টেনে আনবেন না। এই মশলা শুধু ফুচকা না, ঘুগনি, ঝালমুড়ি ইত্যাদিতেও টিপিক্যাল বাঙালি স্বাদগন্ধ নিয়ে আসে। মুদি মশলা বানানোর জন্য লাগবে,

উপকরণঃ
১/৪ কাপ গোটা জিরা
১/৪ কাপ গোটা ধনে
১/৮ কাপ লঙ্কাগুঁড়ো
১/৮ কাপ আমচুর পাউডার
২-৩টি শুকনো লাল লঙ্কা
১০টি তেজ পাতা

এবার একটা শুকনো লোহা বা অ্যালুমিনিয়ামের কড়াইতে প্রথমে গোটা জিরে আর গোটা ধনে দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিন। একটু ব্রাউন কালার হবে, আর মনোমোহিনী গন্ধ হবে, তখনই নামিয়ে নিন, আর কড়াই থেকে সরিয়ে রাখুন। কালো না হয়ে যায় যেন।

সেম প্রসেসে শুকনো লঙ্কা ভেজে নিন।

সেম প্রসেসে ১০টি তেজপাতাকেও কুড়মুড়ে করে শুকনো কড়াইতে ভেজে নিন।

এবার একটা মিক্সারে সব উপকরণ একসাথে দিয়ে একটা গুঁড়ো তৈরি করুন।

নিয়মমত এই মশলায় ১/৮ কাপ বিটনুন মেশানো উচিত, কিন্তু হায়দ্রাবাদি আবহাওয়ায় সেটা সম্ভব। কিন্তু কলকাতার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কতটা সম্ভব জানি না। তাই আমার মতে বিটনুন না মিশিয়ে ওই মশলা সংরক্ষণ করা উচিত। তারপর স্বাদমতো নুন বা বিটনুন মিশিয়ে নিলেই হবে।

ফুচকার ভেতরের আলুর পুর
-----------------------------------

কুড়িটা ফুচকার পুর করতে লাগবে -
তিন আঁটি ধনেপাতা একদম কুচো করে নিন। যে সব ঘটিরা ধনেপাতা খাননা, তাঁরা জানেননা কি হারাচ্ছেন। কুচো করতে কাঁচিও ব্যবহার করতে পারেন। একটু কুচো তেঁতুল জলের জন্যেও সরিয়ে রাখুন।
দুটো কাঁচালঙ্কা একদম কুচিয়ে নিন। আমার মতো যাঁদের কাচাঁলংকায় এলার্জি তাঁরা বাদ দিন বা নিজস্ব বাবিকে বলুন কুচিয়ে দেবে।
দুইখান সেদ্ধ বড় আলু। অবশ্য গতবার আমরা পাঁচটা আলু দিয়েও ম্যানেজ করতে পারিনি। তবে অনুপাতটা বোঝানোর জন্য দুটো বললাম।
মুদী মশলা এক চামচ (মুদী মশলার রেসিপি আগের পর্বে আছে)
ইচ্ছে হলে মটর বা ছোলা দেবেন, ভেজানো এবং সেদ্ধ।
নুন বা বিটনুন বা দুটোই স্বাদমতো।
নীচের তেঁতুল জল থেকে একচামচ ঝেড়ে দিলে কিসিকো পতা নেহি চলেগা।
সব কিছু ভালো করে মিশিয়ে চটকে নিন। আগে হাত ধুয়ে নেবেন, না হলে আপনার আর বাজারের ফুচকাওয়ালার মধ্যে পার্থক্য কি? তেঁতুলজলটা অপশনাল। ওটাই আপনাকে সিক্রেট সুপারস্টার বানাবে। পোচুরবার টেস্ট করুন, করে করে পুর অদ্ধেক করে নিন। তবেই না টেস্ট হবে।

দ্য তেঁতুল জল
------------------

মুদী মশলা
তেঁতুলের ক্কাথ
বিটনুন
নুন
ধনেপাতা কুচো
কাঁচালঙ্কা বাটা ( ইচ্ছেমত)
লঙ্কাগুঁড়ো (ইচ্ছেমত)
চাটমশলা (ইচ্ছেমত)
একটা ছোট ডেকচি বা অনুরূপ গভীর পাত্রে সব কিছু মেশান, জল দিন। ব্যাপারটা পুরোপুরি স্বাদানুসার তাই কোনোকিছুরই মাপ বলা হয়নি।

এবার আসল কাজ, ফুচকাওয়ালা হওয়া মানে সব মেশানো
-----------------------------------------------------------------------

টেবিলে ফুচু (আগেই বলেছি অতিরিক্ত প্রেমে আমরা মধুর ডাকনাম দিতে ভালোবাসি), ফুচুর আলু পুর, তেঁতুল জল সব কিছু আলাদা আলাদা পাত্রে নিয়ে বসুন।
একদম শেষ মুহুর্ত অবধি ফুচুদের ফ্রস্টফ্রি ফ্রিজে রাখাই মঙ্গল, না হলে ফুচুর ফচকেপনা ফিউজ হয়ে যেতে পারে, তখন সেরেফ লুচি মনে হবে কিন্তু।
ফুচু নিয়ে পেটের মধ্যে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ফুটো করুন। ওর কাতুকুতু লাগবে, কিন্তু তবুও ও কিচ্ছু বলবে না। একদম বুকফাটে তবু মুখফোটে না কেস।
তাপ্পর পুর ফুচুর হৃদয়ে এন্টার করুন। হায়দ্রাবাদে অনেকে আগে পেঁয়াজকুচো দেন। কোনো মানে হয়?
তাপ্পর তেঁতুল জলে ডুবিয়ে প্রিয়জনকে দেওয়ার আগে নিজের মুখে ঢোকান। ঠিক টেস্ট হয়েছে? হলেও না বলুন, আর পাঁচ ছটা টেস্ট করুন। আর না হলে তো কথাই নেই, আবার মশলাপাতি দিয়ে একটু টুইক করুন। তাপ্পর ভাগ করে খান। মনে রাখবেন রাঁধুনি এবং মিক্স করার মূল হোতা আপনি, কাজেই গোটা দশ বারো আপনার এম্মি এম্মি ফাউ হয়।

Comments