ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে উকুনের স্বপ্ন দেখছিলাম। মানে উকুনাক্রমণ কতদুর ভয়াবহ হতে পারে তাই আর কি। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন আমার মাথায় উকুন নেই। সেই ক্লাস ইলেভেনে হয়েছিলো শেষবার। তখন আমার মাথায় প্রচুর চুল, ইয়া মোটকা মোটকা দুটো বিনুনি হয় কোমর অবধি। ক্লাস ইলেভেনে উকুন হওয়ার ফলাফলটা মারাত্মক ছিলো। একদিন বারান্দায়, বাবার পুরোনো ধুতি পেতে মেডিকার দিয়ে রীনামাসি একঘন্টা যুদ্ধ করেছিলো। ফলাফলের ঘটনাটা মারাত্মক হলেও উকুন হওয়ার ঘটনাটা রীতিমত রোমহর্ষক। তাই সেই কথা বলার জন্যেই শীতের দিনে জমিয়ে বসেছি।
গল্প শুরু করার আগে একটু প্রিল্যুড দরকার। আমি আমার স্কুল বহুমুখী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে পড়িনি ইলেভেন এবং টুয়েলভে। আমি ভর্তি হয়েছি ফার্ণ রোডের কমলা চ্যাটার্জি স্কুল ফর গার্লসএএ। ভর্তি হওয়ার কারন আমার সাইকোলজি পড়ার ইচ্ছে ছিলো এবং আমার স্কুলে সেই সাবজেক্ট ছিলো না। কমলা চ্যাটার্জিতে আমার মা পড়েছেন, পিপিও। সেখানে সাইকোলজি আছে জেনে সেখানে ভর্তি হলাম এবং ইমিডিয়েটলি বাঁশ বনে শেয়াল রাজা হয়ে গেলাম। কেনো জানিনা আমার ইস্কুলে প্রচুর ফ্যান হয়েছিলো, আমি প্রতিদিন বেশ কিছু চিঠিচাপাটি, গোলাপফুল, কার্ড ইত্যাদি পেতাম।
এমতাবস্থায় ইস্কুল থেকে শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম ঠিক হল। আজ ভোরে রওয়ানা দিয়ে কাল সন্ধ্যায় ফেরা হবে। আমি তো খুব উৎসাহী হয়ে বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, যাবি? চল না? দেবাঙ্গনা আর নাফিসা কেউ রাজি হল না, তিনজন মৌমিতা যাচ্ছে, সোমা, আমি, রমা, গৌরী এই সাতজন বি সেকশনের আর এ সেকশন থেকে দুইজন। এই মাত্র নয়জন ক্লাস ইলেভেনের। জনাবারো ক্লাস টুয়েলভের আর গোটাকুড়ি নাইনের। মোটামুটি চল্লিশজন। আর সাথে পাঁচজন শিক্ষিকা যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমাদের ক্লাসে চারজন মৌমিতা আর দুইজন সোমা ছিলো। মৌমিতাদের আমরা ভাগ করে নিয়েছিলাম, বাচ্চা মৌমিতা (কারণ সে সবথেকে বেঁটেখাটো ছিলো), চুলছাঁটা মৌমিতা ( এ আমার খুবই ভালো বন্ধু ছিলো, বয়েজকাট চুল ছিলো), লম্বা মৌমিতা ( কারণ সে হেবি লম্বা ছিলো) আর গন্ধ মৌমিতা ( কারণ তার গায়ে এবং মুখে হেব্বি গন্ধ ছিল)। শেষোক্ত জন তার এই নামকরণ হয়েছে সেটাই জানত না। জানতাম আমরা কয়েকজন। আরো জানত না এ সেকশনের মেয়েরা আর সোমা।এঁদের মধ্যে বাচ্চা মৌমিতা ছাড়া বাকি সকলেই গেছিলো ট্রিপে। এ সেকশন আর বি সেকশনের পার্থক্যটা জানিয়ে রাখা দরকার। এ সেকশনে পিওর সায়েন্স অথবা জিওগ্রাফি আছে এমন মেয়েরা বসত। আমার দুটোই ছিলো না বলে বি সেকশন। এ সেকশন নিজেদের সামান্য সুপিরিয়র মনে করত।
যেদিন ট্রিপ হবে সেদিন তো আমি মা আর আপ্পির সাথে ভোরভোর পৌঁছে গেছি। গিয়ে দেখি একজন মাত্র শিক্ষিকা এসেছেন, আর বাকীরা তো দূর, বাসও এসে পৌছয়নি। শেষে বাস এলো, বন্ধুরাও এলো। আমি ভালো দেখে একটা জানলার ধারে বসলাম। আমার পাশে চুলছাঁটা মৌমিতা ( এবার থেকে শুধু মৌমিতা একেই বলব), তারপাশে গৌরী। পিছনে আরো কারা কারা বসেছিলো মনে নেই। আমি সিটের উপর পিছন ফিরে বসে কাদের সাথে যেন বকবক করছি, এমন সময় মৌমিতা “ আরে দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ এসে গেছে, গঙ্গা দেখ-” বলে আমাকে টেনে বসিয়ে দিলো। আর জানলার কব্জায় লেগে আমার শাড়ীটা পুরো দুই ফেরতা উইদ শায়া এল শেপ হয়ে ছিঁড়ে গেলো। কেউ বুঝতে পারেনি, আমিও চুপচাপ বসে বসে ভাবছি এবার কি করা যায়। হাজার হোক আমার একটা পেস্টিজ আছে। বাসে ছোট মেয়েরা আছে, জানতে পারলে হেব্বি হাসবে। তাছাড়া রান্নার কাকুটাকুরা পিছনের সিটে বসে যাচ্ছেন। তাদের সামনে কী করে শাড়ি বদলাব? আমি তো চুপটি করে বসে আছি। বাসে গান চলছে। আমি তখন নাচের জন্য ফেমাস, তবু আমি কিছুতেই নাচতে উঠছি না।
ইতিমধ্যে প্রায় ঘন্টা দুয়েক চলার পর বাস একটা ফাঁকা মাঠের পাশে খারাপ হয়ে গেলো। চারদিকে কিচ্ছু নেই। বাসের ড্রাইভার কি ভাবে যেন নিকটবর্তী ফোনবুথে গিয়ে ফিরে এলো, বলল, বাস ঠিক হবে না। কলকাতা থেকে অন্য বাস ছেড়েছে, সে এলে তবে আমরা আবার রওয়ানা দেবো। মানে অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে যখন ঘড়ি এগারোটার দিকে এগোচ্ছে, তখন স্কুলের দিদিমণিরা ঠিক করলেন ওখানেই দুপুরের খাওয়া হবে। সেইমত কাছের একমাত্র ভাতের হোটেলে গিয়ে আমাদের রান্নার কাকুরা রান্না শুরু করে দিলেন। রান্নার শেষের পথে যখন তখন বৃষ্টি শুরু হল। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা আর কতরকম হতে পারে। প্রথম লটে ক্লাস নাইনরা খেতে চলে গেলো। তখন আমি মিসচিফ ম্যানেজ করতে শুরু করলাম। বাসের একদম শেষ সিটে গিয়ে, আঁচলটা টেনে আরেকটু লম্বা করে নিলাম। তাতে দুটো ছেঁড়ার জায়গা আলাদা হয়ে গেলো তাতে, অত আর বোঝা যায় না। তারপর আঁচল ঘুরিয়ে কোমরে গোঁজা। তাতে আঁচলটা ছেঁড়াটাকে সামাল দিয়ে দিলো। তারপর আমরা খেতে গেলাম। বাপরেবাপ আমার জীবনের স্মরনীয় খারাপ খাওয়া। প্রথমে যেখানে বসলাম সেটা একটা চৌকি। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খোলা নর্দমা। মাথার উপর টালির চাল থেকে ভাতের উপর টিপটিপ করে বৃষ্টির জল পড়ছে, সাথে সাথে সরিয়ে নিলাম। ভাত পুরো সেদ্ধ হয়নি, ট্যালটেলে ডাল, কচকচে আলুভাজা। তারপর একটা বিশাল মাছভাজা এলো। মাছ খাইনা বলতেই একজন দিদি বললেন “দাঁড়াও তোমার ডিমভাজা হচ্ছে। মাছটা কাউকে তুলে দাও।” আমি সোমাকে তুলে দিলাম। সোমা ছালটা ছাড়াতেই ভেতরটা কাঁচা এবং পচা। আমার তখন গন্ধে প্রায় বমি করার মত অবস্থা। ইতিমধ্যে আমার পাতে পড়েছে একটা ডিমভাজা, তাতে ভর্তি কাঁচাকাঁচা পেঁয়াজ। কি মুশকিলা, আমি পেঁয়াজ খাইনা ডিমভাজায়। কিন্তু কোনোমতে সেটাই বেছেবেছে খেলাম, আর থালা দেখে এমনিতেই ঘেন্না লাগছিল বলে সেরেফ উপরের অংশটা খেলাম। থালার সাথে সংযুক্ত কিছুই খেতে পারিনি। তারপর খাওয়া নামক অত্যাচার শেষ হতেই আমরা আবার বাসে চলে এলাম। তারপর সেই বাস এসে যখন পৌঁছল তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। আমাদের বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছে যাওয়ার কথা, পৌঁছলাম বিকেল ছটা। তখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে তাই আমাদের খোয়াই বেড়াতে যাওয়া ক্যানসেল হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে সারাক্ষণ বৃষ্টি পড়েছে এবং পড়েই যাচ্ছে।
হোটেলে এসে আমরা দোতলা আর তিনতলা দখল করলাম। তিনতলায় একটা ডরমেটরি মত ছিলো, সেখানে ক্লাস নাইনকে রাখা হল। আর দোতলায় আমরা। প্রতি ডবলবেডরুমে তিনজন করে রাখা হয়েছিলো। প্রথম রুমে আমি, রমা আর সোমা ছিলাম। তারপরের রুমে ছিলো মৌমিতা, লম্বা মৌমিতা আর গৌরী। আর বেচারা গন্ধ মৌমিতার এ সেকশনের সাথে ঘর হয়েছিলো। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার পরেই আমাদের জন্য লম্বা লম্বা গ্লাসে চা এলো, সাথে আলুর পকোড়া আর মুড়ি। আগের খাওয়াটা যদি আমার জীবনের সবথেকে খারাপ খাওয়া হয়, এটা আমার জীবনের আজ অবধি সবথেকে তৃপ্তির খাওয়া। দুপুরে ঠিক করে খাইনি বলে খিদেও পেয়েছিলো জব্বর। হুমহাম করে খেয়ে ফেললাম। তারপর ঘরের মধ্যে দুই ঘরের সকলে মিলে নরক গুলজার শুরু হল। গান, নাচ, গল্প, অন্যদের বিভিন্ন কেচ্ছা, গসিপ, ছবিতোলা সব চলছিলো। ইতিমধ্যে ক্লাস টুয়েলভের কিছু পাবলিক এসে মৌমিতাকে আর গৌরীকে ডেকে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো তারা, দুজনেরই হাত পা ঠান্ডা, মুখ একদম ফ্যাকাশে, ভয়ে কেঁদে ফেলছে। বেশ কিছুক্ষণ কি হয়েছে কি হয়েছে জিজ্ঞাসার পর একজন কোনোক্রমে বলল, “এই হোটেলে ভূত আছে“।
মাইরি বলছি, আমার মাথায় সিম্পলি আগুন জ্বলে গেলো। “ভূত মানে?” আমার প্রশ্নের উত্তরে ওরা জানালো তিনতলার পরে ছাত আছে। সেখানে যাওয়ার পথে সিঁড়ির মধ্যে একটা লফট মতো করা আছে। সেখানে সাদা কাপড়ে মোড়া কঙ্কাল আছে। সে নাকি হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো। ক্লাস টুয়েলভের দিদিরা আমাদের ক্লাসের সবথেকে ভিতু দুটো মেয়েকে ডেকে নিয়ে ওই সিঁড়িতে নিয়ে গিয়ে তারপর এক ধাক্কা দিয়ে আলো নিভিয়ে নীচে নেমে এসেছে। আর মৌমিতা আর গৌরী কোনোক্রমে আমাদের ঘরে পৌঁছেছে। শুনে আমি ক্লাস টুয়েলভের দিদিদের উপর হেব্বি রেগে গেলাম। বৃষ্টির চোটে আমার চুল ভিজে যাওয়ায় আমি বিনুনী খুলে চুল শুকাচ্ছিলাম। সন্ধ্যে আটটার সময় একগাদা ঝাঁকড়াচুল নিয়ে আমি গিয়ে টুয়েলভের দিদিদের বললাম, আমি ভূত দেখব। তারা স্বীকার করতেই রাজী নয়। তখন আমি বললাম, তাহলে আমি দিদিমনিদের বলছি তোমরা দুজনকে অন্যায় ভয় দেখিয়েছো। তখন তারা আমাকে তিনতলা অবধি পৌঁছে বলল এর উপরের সিঁড়িতে ভূত আছে। আমি নিজে উঠে যা দেখার দেখে নিয়ে তারপর আবার নীচে এলাম। এবার অনিচ্ছুক মৌমিতা আর গৌরীকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে আবার উপরে নিয়ে গেলাম। “চল ভূত আসলে কি সেটা দেখবি” তিনতলার সিঁড়ির লফটে একগাদা বাঁশ না কি যেন তিরপল দিয়ে মুড়ে রাখা আছে। আর একটা এন্টেনা বা কিছু একটু বেরিয়ে আছে। ওটাই হল কঙ্কালের বেরিয়ে থাকা হাত। আলো জ্বালিয়ে ভালো করে দেখিয়ে, হাত দিয়ে টিপে, তারপর তিরপল সরিয়ে বাঁশ দেখিয়ে ওই দুজন মামনির ভয় একদম ভাঙ্গিয়ে বীরের মত দুমদাম করে নেমে এলাম। দোতলায় টুয়েলভের দিদিরা বেশ জটলা করছিলো। বর্ষাদি আমাকে একটু পছন্দ করতো, সে বলল, “তোর কি রাশি রে ঋতুপর্ণা?” আমি বললাম, “কেন জিজ্ঞাসা করছ? আমি যে রাশিই হই, তুমি বলবে, ও, সেইজন্যেই। তাই তুই দেখতেই ভূত পচে গিয়ে বাঁশ বেরিয়েছে।” পরে শুনেছি, সেদিন থেকেই বর্ষাদিও আমার ফ্যান, এমনকি ক্লাস টুয়েলভের মেয়েরা অনেক প্যাঁক দিয়েছে, “তুই বয়সে ছোট একটা মেয়ের ফ্যান হলি কি করে?” কিন্তু বর্ষাদি বিন্দুমাত্র টলেনি। তারপর ক্লাস টুয়েলভকে বীরদর্পে ঝেড়ে আমি ঘরে এসে ঘোষণা করলাম, যেহেতু গৌরী আর মৌমিতা ভয় পেয়েছে, তাই পাশের ঘরে ওরা দুইজন শোবে। আর আমরা গাদাগাদি করে চারজন শোবো। মানে আমাদের দলে একজন বাড়লো, লম্বা মৌমিতা। এরপর রাতের খাবারের ডাক পড়ল, ক্লাস টুয়েলভ আমাদের দিকেই তাকাচ্ছে না, ছোটোর কাছে ঝাড় খেয়ে হেব্বি মানে লেগেছে। রাতে খাবার পর আমরা ঘরে এসে আবার আড্ডা দিচ্ছি। এর মধ্যে দরজায় টোকা। দেখি গন্ধ মৌমিতা এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে নাকি এ সেকশনের মেয়েরা তাড়িয়ে দিয়েছে ঘর থেকে। বলেছে, তুই বি সেকশন, ওদের সাথে ঘুমো। আমি মুখে খুব এ সেকশনকে গালি দিলেও মনে মনে ভাবলাম, গন্ধের কেসটা টের পেয়ে গেছে মনে হয়। তাই প্রথমে গৌরী আর মৌমিতাকে পাশের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তারপর একদম দেয়াল ঘেঁষে গন্ধ মৌমিতা, তারপর একমাত্র গন্ধ সম্পর্কে অনজান নারী সোমা, তারপর লম্বা মৌমিতা, তারপর রমা তারপর আমি শুলাম। এক কাতে শোয়া সব। পাশ ফেরার যায়গাও নেই। পরদিন সকাল দশটায় শান্তিনিকেতনে ঘুরতে যাওয়া হবে। রাত বারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জল নেই। আমাদের শুতে শুতেই রাত বারোটা হয়েছে।
এরপরের গল্প অতি সংক্ষিপ্ত। আমরা রাত তিনটেয় উঠে বসলাম সবাই। পাশ না ফিরলে কেউ অত গাদাগাদি করে ঘুমোতে পারছি না। শুধু গন্ধ মৌমিতা ঘুমোচ্ছে। আমাদের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো, আমরা ঘর থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে ক্লাস টুয়েলভের চারটে ঘরে দরজা নক করে পালিয়ে এলাম। চারজনে চারটে ঘরে একসাথে তিনখানা করে নক। আর পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল একটা হাউমাউএ, মৌমিতাকে আবার ভূতে ধরেছে। গিয়ে দেখি আগের দিন রাত বারোটার পর সম্ভবত গৌরী বাথরুমে গেছিলো, ঘুমচোখে ভুলে গেছিলো জল নেই, তাই সব কল খুলে রেখেছিলো। সকালে মৌমিতা বাথরুমে গেছে, সেও ঘুমচোখে। তারপর হটাৎ হিসুর মাঝে সবকটা কল থেকে জল পড়তে লেগেছে, মায় শাওয়ার থেকেও। মৌমিতা তো দৃঢ় বিশ্বাস, ঋতুপর্ণার সাথে যাওয়ার সময় থেকে ভূত তার পিছনে পড়েছে। তারপর তাকে বোঝাতে আরো এক ঘন্টা। ইতিমধ্যে আমরা রেডি হয়েছি। বাসে ওঠার সময়ে বর্ষাদি আমাকে ফিসফিস করে জানালো, “তুই নিশ্চয়ই ভুল ভেবেছিস, ভূত সত্যিই আছে, নয়তো ভোর তিনটেয় টুয়েলভের চারটে ঘরে একসাথে তিনবার করে নক কে করলো??”
আসল প্রশ্নটাই অমিট করে গেছি। ফেরার পথে আমাকে ক্লাস নাইনের এক কন্যা জানালো, রমাদির মাথায় বড় বড় উকুন আছে, সে স্বচক্ষে দেখেছে।
গল্প শুরু করার আগে একটু প্রিল্যুড দরকার। আমি আমার স্কুল বহুমুখী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে পড়িনি ইলেভেন এবং টুয়েলভে। আমি ভর্তি হয়েছি ফার্ণ রোডের কমলা চ্যাটার্জি স্কুল ফর গার্লসএএ। ভর্তি হওয়ার কারন আমার সাইকোলজি পড়ার ইচ্ছে ছিলো এবং আমার স্কুলে সেই সাবজেক্ট ছিলো না। কমলা চ্যাটার্জিতে আমার মা পড়েছেন, পিপিও। সেখানে সাইকোলজি আছে জেনে সেখানে ভর্তি হলাম এবং ইমিডিয়েটলি বাঁশ বনে শেয়াল রাজা হয়ে গেলাম। কেনো জানিনা আমার ইস্কুলে প্রচুর ফ্যান হয়েছিলো, আমি প্রতিদিন বেশ কিছু চিঠিচাপাটি, গোলাপফুল, কার্ড ইত্যাদি পেতাম।
এমতাবস্থায় ইস্কুল থেকে শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রাম ঠিক হল। আজ ভোরে রওয়ানা দিয়ে কাল সন্ধ্যায় ফেরা হবে। আমি তো খুব উৎসাহী হয়ে বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, যাবি? চল না? দেবাঙ্গনা আর নাফিসা কেউ রাজি হল না, তিনজন মৌমিতা যাচ্ছে, সোমা, আমি, রমা, গৌরী এই সাতজন বি সেকশনের আর এ সেকশন থেকে দুইজন। এই মাত্র নয়জন ক্লাস ইলেভেনের। জনাবারো ক্লাস টুয়েলভের আর গোটাকুড়ি নাইনের। মোটামুটি চল্লিশজন। আর সাথে পাঁচজন শিক্ষিকা যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমাদের ক্লাসে চারজন মৌমিতা আর দুইজন সোমা ছিলো। মৌমিতাদের আমরা ভাগ করে নিয়েছিলাম, বাচ্চা মৌমিতা (কারণ সে সবথেকে বেঁটেখাটো ছিলো), চুলছাঁটা মৌমিতা ( এ আমার খুবই ভালো বন্ধু ছিলো, বয়েজকাট চুল ছিলো), লম্বা মৌমিতা ( কারণ সে হেবি লম্বা ছিলো) আর গন্ধ মৌমিতা ( কারণ তার গায়ে এবং মুখে হেব্বি গন্ধ ছিল)। শেষোক্ত জন তার এই নামকরণ হয়েছে সেটাই জানত না। জানতাম আমরা কয়েকজন। আরো জানত না এ সেকশনের মেয়েরা আর সোমা।এঁদের মধ্যে বাচ্চা মৌমিতা ছাড়া বাকি সকলেই গেছিলো ট্রিপে। এ সেকশন আর বি সেকশনের পার্থক্যটা জানিয়ে রাখা দরকার। এ সেকশনে পিওর সায়েন্স অথবা জিওগ্রাফি আছে এমন মেয়েরা বসত। আমার দুটোই ছিলো না বলে বি সেকশন। এ সেকশন নিজেদের সামান্য সুপিরিয়র মনে করত।
যেদিন ট্রিপ হবে সেদিন তো আমি মা আর আপ্পির সাথে ভোরভোর পৌঁছে গেছি। গিয়ে দেখি একজন মাত্র শিক্ষিকা এসেছেন, আর বাকীরা তো দূর, বাসও এসে পৌছয়নি। শেষে বাস এলো, বন্ধুরাও এলো। আমি ভালো দেখে একটা জানলার ধারে বসলাম। আমার পাশে চুলছাঁটা মৌমিতা ( এবার থেকে শুধু মৌমিতা একেই বলব), তারপাশে গৌরী। পিছনে আরো কারা কারা বসেছিলো মনে নেই। আমি সিটের উপর পিছন ফিরে বসে কাদের সাথে যেন বকবক করছি, এমন সময় মৌমিতা “ আরে দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ এসে গেছে, গঙ্গা দেখ-” বলে আমাকে টেনে বসিয়ে দিলো। আর জানলার কব্জায় লেগে আমার শাড়ীটা পুরো দুই ফেরতা উইদ শায়া এল শেপ হয়ে ছিঁড়ে গেলো। কেউ বুঝতে পারেনি, আমিও চুপচাপ বসে বসে ভাবছি এবার কি করা যায়। হাজার হোক আমার একটা পেস্টিজ আছে। বাসে ছোট মেয়েরা আছে, জানতে পারলে হেব্বি হাসবে। তাছাড়া রান্নার কাকুটাকুরা পিছনের সিটে বসে যাচ্ছেন। তাদের সামনে কী করে শাড়ি বদলাব? আমি তো চুপটি করে বসে আছি। বাসে গান চলছে। আমি তখন নাচের জন্য ফেমাস, তবু আমি কিছুতেই নাচতে উঠছি না।
ইতিমধ্যে প্রায় ঘন্টা দুয়েক চলার পর বাস একটা ফাঁকা মাঠের পাশে খারাপ হয়ে গেলো। চারদিকে কিচ্ছু নেই। বাসের ড্রাইভার কি ভাবে যেন নিকটবর্তী ফোনবুথে গিয়ে ফিরে এলো, বলল, বাস ঠিক হবে না। কলকাতা থেকে অন্য বাস ছেড়েছে, সে এলে তবে আমরা আবার রওয়ানা দেবো। মানে অনির্দিষ্টকালের অপেক্ষা। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে যখন ঘড়ি এগারোটার দিকে এগোচ্ছে, তখন স্কুলের দিদিমণিরা ঠিক করলেন ওখানেই দুপুরের খাওয়া হবে। সেইমত কাছের একমাত্র ভাতের হোটেলে গিয়ে আমাদের রান্নার কাকুরা রান্না শুরু করে দিলেন। রান্নার শেষের পথে যখন তখন বৃষ্টি শুরু হল। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা আর কতরকম হতে পারে। প্রথম লটে ক্লাস নাইনরা খেতে চলে গেলো। তখন আমি মিসচিফ ম্যানেজ করতে শুরু করলাম। বাসের একদম শেষ সিটে গিয়ে, আঁচলটা টেনে আরেকটু লম্বা করে নিলাম। তাতে দুটো ছেঁড়ার জায়গা আলাদা হয়ে গেলো তাতে, অত আর বোঝা যায় না। তারপর আঁচল ঘুরিয়ে কোমরে গোঁজা। তাতে আঁচলটা ছেঁড়াটাকে সামাল দিয়ে দিলো। তারপর আমরা খেতে গেলাম। বাপরেবাপ আমার জীবনের স্মরনীয় খারাপ খাওয়া। প্রথমে যেখানে বসলাম সেটা একটা চৌকি। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে খোলা নর্দমা। মাথার উপর টালির চাল থেকে ভাতের উপর টিপটিপ করে বৃষ্টির জল পড়ছে, সাথে সাথে সরিয়ে নিলাম। ভাত পুরো সেদ্ধ হয়নি, ট্যালটেলে ডাল, কচকচে আলুভাজা। তারপর একটা বিশাল মাছভাজা এলো। মাছ খাইনা বলতেই একজন দিদি বললেন “দাঁড়াও তোমার ডিমভাজা হচ্ছে। মাছটা কাউকে তুলে দাও।” আমি সোমাকে তুলে দিলাম। সোমা ছালটা ছাড়াতেই ভেতরটা কাঁচা এবং পচা। আমার তখন গন্ধে প্রায় বমি করার মত অবস্থা। ইতিমধ্যে আমার পাতে পড়েছে একটা ডিমভাজা, তাতে ভর্তি কাঁচাকাঁচা পেঁয়াজ। কি মুশকিলা, আমি পেঁয়াজ খাইনা ডিমভাজায়। কিন্তু কোনোমতে সেটাই বেছেবেছে খেলাম, আর থালা দেখে এমনিতেই ঘেন্না লাগছিল বলে সেরেফ উপরের অংশটা খেলাম। থালার সাথে সংযুক্ত কিছুই খেতে পারিনি। তারপর খাওয়া নামক অত্যাচার শেষ হতেই আমরা আবার বাসে চলে এলাম। তারপর সেই বাস এসে যখন পৌঁছল তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। আমাদের বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছে যাওয়ার কথা, পৌঁছলাম বিকেল ছটা। তখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে তাই আমাদের খোয়াই বেড়াতে যাওয়া ক্যানসেল হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে সারাক্ষণ বৃষ্টি পড়েছে এবং পড়েই যাচ্ছে।
হোটেলে এসে আমরা দোতলা আর তিনতলা দখল করলাম। তিনতলায় একটা ডরমেটরি মত ছিলো, সেখানে ক্লাস নাইনকে রাখা হল। আর দোতলায় আমরা। প্রতি ডবলবেডরুমে তিনজন করে রাখা হয়েছিলো। প্রথম রুমে আমি, রমা আর সোমা ছিলাম। তারপরের রুমে ছিলো মৌমিতা, লম্বা মৌমিতা আর গৌরী। আর বেচারা গন্ধ মৌমিতার এ সেকশনের সাথে ঘর হয়েছিলো। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার পরেই আমাদের জন্য লম্বা লম্বা গ্লাসে চা এলো, সাথে আলুর পকোড়া আর মুড়ি। আগের খাওয়াটা যদি আমার জীবনের সবথেকে খারাপ খাওয়া হয়, এটা আমার জীবনের আজ অবধি সবথেকে তৃপ্তির খাওয়া। দুপুরে ঠিক করে খাইনি বলে খিদেও পেয়েছিলো জব্বর। হুমহাম করে খেয়ে ফেললাম। তারপর ঘরের মধ্যে দুই ঘরের সকলে মিলে নরক গুলজার শুরু হল। গান, নাচ, গল্প, অন্যদের বিভিন্ন কেচ্ছা, গসিপ, ছবিতোলা সব চলছিলো। ইতিমধ্যে ক্লাস টুয়েলভের কিছু পাবলিক এসে মৌমিতাকে আর গৌরীকে ডেকে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো তারা, দুজনেরই হাত পা ঠান্ডা, মুখ একদম ফ্যাকাশে, ভয়ে কেঁদে ফেলছে। বেশ কিছুক্ষণ কি হয়েছে কি হয়েছে জিজ্ঞাসার পর একজন কোনোক্রমে বলল, “এই হোটেলে ভূত আছে“।
মাইরি বলছি, আমার মাথায় সিম্পলি আগুন জ্বলে গেলো। “ভূত মানে?” আমার প্রশ্নের উত্তরে ওরা জানালো তিনতলার পরে ছাত আছে। সেখানে যাওয়ার পথে সিঁড়ির মধ্যে একটা লফট মতো করা আছে। সেখানে সাদা কাপড়ে মোড়া কঙ্কাল আছে। সে নাকি হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো। ক্লাস টুয়েলভের দিদিরা আমাদের ক্লাসের সবথেকে ভিতু দুটো মেয়েকে ডেকে নিয়ে ওই সিঁড়িতে নিয়ে গিয়ে তারপর এক ধাক্কা দিয়ে আলো নিভিয়ে নীচে নেমে এসেছে। আর মৌমিতা আর গৌরী কোনোক্রমে আমাদের ঘরে পৌঁছেছে। শুনে আমি ক্লাস টুয়েলভের দিদিদের উপর হেব্বি রেগে গেলাম। বৃষ্টির চোটে আমার চুল ভিজে যাওয়ায় আমি বিনুনী খুলে চুল শুকাচ্ছিলাম। সন্ধ্যে আটটার সময় একগাদা ঝাঁকড়াচুল নিয়ে আমি গিয়ে টুয়েলভের দিদিদের বললাম, আমি ভূত দেখব। তারা স্বীকার করতেই রাজী নয়। তখন আমি বললাম, তাহলে আমি দিদিমনিদের বলছি তোমরা দুজনকে অন্যায় ভয় দেখিয়েছো। তখন তারা আমাকে তিনতলা অবধি পৌঁছে বলল এর উপরের সিঁড়িতে ভূত আছে। আমি নিজে উঠে যা দেখার দেখে নিয়ে তারপর আবার নীচে এলাম। এবার অনিচ্ছুক মৌমিতা আর গৌরীকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে আবার উপরে নিয়ে গেলাম। “চল ভূত আসলে কি সেটা দেখবি” তিনতলার সিঁড়ির লফটে একগাদা বাঁশ না কি যেন তিরপল দিয়ে মুড়ে রাখা আছে। আর একটা এন্টেনা বা কিছু একটু বেরিয়ে আছে। ওটাই হল কঙ্কালের বেরিয়ে থাকা হাত। আলো জ্বালিয়ে ভালো করে দেখিয়ে, হাত দিয়ে টিপে, তারপর তিরপল সরিয়ে বাঁশ দেখিয়ে ওই দুজন মামনির ভয় একদম ভাঙ্গিয়ে বীরের মত দুমদাম করে নেমে এলাম। দোতলায় টুয়েলভের দিদিরা বেশ জটলা করছিলো। বর্ষাদি আমাকে একটু পছন্দ করতো, সে বলল, “তোর কি রাশি রে ঋতুপর্ণা?” আমি বললাম, “কেন জিজ্ঞাসা করছ? আমি যে রাশিই হই, তুমি বলবে, ও, সেইজন্যেই। তাই তুই দেখতেই ভূত পচে গিয়ে বাঁশ বেরিয়েছে।” পরে শুনেছি, সেদিন থেকেই বর্ষাদিও আমার ফ্যান, এমনকি ক্লাস টুয়েলভের মেয়েরা অনেক প্যাঁক দিয়েছে, “তুই বয়সে ছোট একটা মেয়ের ফ্যান হলি কি করে?” কিন্তু বর্ষাদি বিন্দুমাত্র টলেনি। তারপর ক্লাস টুয়েলভকে বীরদর্পে ঝেড়ে আমি ঘরে এসে ঘোষণা করলাম, যেহেতু গৌরী আর মৌমিতা ভয় পেয়েছে, তাই পাশের ঘরে ওরা দুইজন শোবে। আর আমরা গাদাগাদি করে চারজন শোবো। মানে আমাদের দলে একজন বাড়লো, লম্বা মৌমিতা। এরপর রাতের খাবারের ডাক পড়ল, ক্লাস টুয়েলভ আমাদের দিকেই তাকাচ্ছে না, ছোটোর কাছে ঝাড় খেয়ে হেব্বি মানে লেগেছে। রাতে খাবার পর আমরা ঘরে এসে আবার আড্ডা দিচ্ছি। এর মধ্যে দরজায় টোকা। দেখি গন্ধ মৌমিতা এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে নাকি এ সেকশনের মেয়েরা তাড়িয়ে দিয়েছে ঘর থেকে। বলেছে, তুই বি সেকশন, ওদের সাথে ঘুমো। আমি মুখে খুব এ সেকশনকে গালি দিলেও মনে মনে ভাবলাম, গন্ধের কেসটা টের পেয়ে গেছে মনে হয়। তাই প্রথমে গৌরী আর মৌমিতাকে পাশের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। তারপর একদম দেয়াল ঘেঁষে গন্ধ মৌমিতা, তারপর একমাত্র গন্ধ সম্পর্কে অনজান নারী সোমা, তারপর লম্বা মৌমিতা, তারপর রমা তারপর আমি শুলাম। এক কাতে শোয়া সব। পাশ ফেরার যায়গাও নেই। পরদিন সকাল দশটায় শান্তিনিকেতনে ঘুরতে যাওয়া হবে। রাত বারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জল নেই। আমাদের শুতে শুতেই রাত বারোটা হয়েছে।
এরপরের গল্প অতি সংক্ষিপ্ত। আমরা রাত তিনটেয় উঠে বসলাম সবাই। পাশ না ফিরলে কেউ অত গাদাগাদি করে ঘুমোতে পারছি না। শুধু গন্ধ মৌমিতা ঘুমোচ্ছে। আমাদের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো, আমরা ঘর থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে ক্লাস টুয়েলভের চারটে ঘরে দরজা নক করে পালিয়ে এলাম। চারজনে চারটে ঘরে একসাথে তিনখানা করে নক। আর পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল একটা হাউমাউএ, মৌমিতাকে আবার ভূতে ধরেছে। গিয়ে দেখি আগের দিন রাত বারোটার পর সম্ভবত গৌরী বাথরুমে গেছিলো, ঘুমচোখে ভুলে গেছিলো জল নেই, তাই সব কল খুলে রেখেছিলো। সকালে মৌমিতা বাথরুমে গেছে, সেও ঘুমচোখে। তারপর হটাৎ হিসুর মাঝে সবকটা কল থেকে জল পড়তে লেগেছে, মায় শাওয়ার থেকেও। মৌমিতা তো দৃঢ় বিশ্বাস, ঋতুপর্ণার সাথে যাওয়ার সময় থেকে ভূত তার পিছনে পড়েছে। তারপর তাকে বোঝাতে আরো এক ঘন্টা। ইতিমধ্যে আমরা রেডি হয়েছি। বাসে ওঠার সময়ে বর্ষাদি আমাকে ফিসফিস করে জানালো, “তুই নিশ্চয়ই ভুল ভেবেছিস, ভূত সত্যিই আছে, নয়তো ভোর তিনটেয় টুয়েলভের চারটে ঘরে একসাথে তিনবার করে নক কে করলো??”
আসল প্রশ্নটাই অমিট করে গেছি। ফেরার পথে আমাকে ক্লাস নাইনের এক কন্যা জানালো, রমাদির মাথায় বড় বড় উকুন আছে, সে স্বচক্ষে দেখেছে।
Comments
Post a Comment