বোবো স্টেটাস ৭

আমি দেড় বছুরে হয়ে গেছি এই মাসের তিন তারিখ। আমার মাম্মাও সেরে গেছে একদম। এই দুটো সবথেকে বড় খবর তোমাদের দেওয়ার ছিলো। আজকাল আমি অনেককিছু বলার চেষ্টা করি। এই তো, কদিন আগেই বললাম গুড নমনিম মাম্মা। মাম্মা আবার সেটা ফেসবুকে লিখেওছে, বেশি অহংকার। আমি আজকাল একটু আধটু বই পড়ি, বই বই বলে কাঁদিও। একটা অনেক ছবিওয়ালা বই আছে আমার এ বি সি ডি লেখা। সেটা আমি নিজেই পড়তে পারি, আসলে খুবই বড় হয়ে গেছি তো। প্রথমেই একটা আপেলের ছবি, তারপর বল, তারপর মিউ, তারপর কুকু, তারপর হাতি, তারপর হাওয়া এইসব আছে। একটা পাতায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কাক, কিন্তু মাম্মা বলে ওটা প্যারট, অন্তত টিয়াপাখি। কিন্তু আমি পাত্তা দিই না। আমাকে হিরো করে মিথিল মামা গল্প লিখেছে, আমার কি এইসব ছোটখাটো কথায় কান দিলে চলে? ওটা কাক, ব্যাস।
আরো দুইখান বই আছে, একটা আবোলতাবোল আর একটা খাইখাই। সেগুলো আমার হাতে দেওয়া হয় না, কারণ আমি নাকি ছিঁড়ে ফেলব। হু! আমি ছবি দেখি। মাম্মা বাবা এরা পড়ে শোনায়। আমি আজকাল একটু পইসি নিয়ে নি বাবার থেকে, আসলে ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখা দরকার তো। আর আমি মাঝেমাঝে ঝাঁটা দিয়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে দিই। বাইচান্স পড়াশোনা না হলে জমাদারের কাজটা অন্তত পাবো। এছাড়া যা পছন্দ হয় না সেটা আমি পাড়ার লালুয়া কালুয়া দুই কুকু কে খাইয়ে দিই। সে বলও হতে পারে, অপছন্দের মোজিও হতে পারে আবার বোতলের ঢাকা হলেই বা আটকাচ্ছে কে। শাঁখ বাজলে আমি মাম্মার কাছে চলে আসি। তিনবার বাজলেই মাম্মা হেই যা করে দেয় আর শাঁখ একদম থেমে যায়। সেইজন্য প্রেসারকুকারের সিটি বাজলে মাম্মা যখন ভয় পায়, তখন আমি ভয় পেলেও দূর থেকে হেই যা করি। কোথাও লেগে গেলে আমি সেই যায়গাকে পপ করতে ভুলি না কখনো। আজ আমার হাতে একটু লেগেছিল। তাই আমি বাবার কাছে একটু ষাট ষাট করেই আবার ফিরে এসে মাম্মার হাত সরিয়ে তারপর চেয়ারকে পপ করে দিয়েছি। একটুও ভুলিনি।
আগে আমি ছোট ছিলাম তো, তাই হাত পা এইসব দেখাতে পারতাম। আজকাল আমি বলতেও পারি, এটা হাত, ওটা পা, এটা চুল, ওটা দাঁত। কামড়ানোটা অনেক কমে গেছে, তবে এখনো খুব আনন্দ হলে নিকটজনকে কামড়ে দিতে ভালোবাসি। ওতে ভালোবাসাটা যে আরো পোক্ত হয়, চালাক মাত্রেই সেটা বুঝবে, এঁদের বুদ্ধির যা ছিরি! আমি ডিম খেতে সবথেকে বেশি ভালোবাসি। ঠামের সাথে আমার শর্তই আছে, আগে ডিম দিতে হবে, তারপর আমি একটু ভাত খাবো। আবার তার পরের গ্রাসে ডিম, তারপর ভাত। এইভাবে চলতে থাকে। এই তো সেদিন, বাবা সেই বইটা থেকে বলল, “বলো দেখি বোবোবাবু, খাইখাই।” আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, “ডিম।” শুনে সবার কি হাসি। আরে ভুল বললাম কোথায়? আমি বড় হয়ে গেছি ওইসব খাইখাই আমি আর বলি না, কি খাইখাই সেটা বলি।
রোজ সকালে আজকাল আমি মাম্মার সাথে একটু ধরাধরি আর লুকোচুরি খেলি। আর বাবার সাথে বল। আগে দাদার সাথে বল খেলতাম, কিন্তু আজকাল দাদার শরীর একটু খারাপ বলে দাদাই উপরের ঘরেই থাকেন বেশি। আমার জামা ছাড়তে পচা লাগে, নতুন জামা ঠান্ডা হয়। আমি চেয়ার টেনে নিয়ে তার উপর দাঁড়িয়ে বেসিনের কল খুলে জল ঘাঁটতে ভালোবাসি কিন্তু প্রায়ই ধরা পড়ে যাই আর হাতা ভেজানোর অপরাধে আমাকে জোর করে জামা ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমার পিকাই কয়েকদিন হল বাড়ি নেই। আজ আমি একটু ঠামের ফোন নিয়ে পিকাইকে ফোন করেছি। ঠাম জিজ্ঞাসা করতে আমি খুবই গম্ভীর হয়ে বলেছি, “কাই, ছছুল”। মানে পিকাই শ্বশুরবাড়ী গেছে, কিন্তু এদের খ্যাঁকখ্যাঁকে হাসির যা অবস্থা, কোনো কিছুকে যদি একটু সিরিয়াসলি নিতে পারে।
ইতিমধ্যে আবার বুল্টুজ্যাজার বিয়ে ছিলো। আমাকে বেশিরভাগ দিনই নিয়ে যাওয়া হয়নি, বা নিয়ে গেলেও তাড়াতাড়ি ফেরত আনা হয়েছে ঠান্ডার দোহাই দিয়ে। দোষের মধ্যে আমি বুল্টুজ্যাজার আশির্বাদে চোদ্দটা পয়সি তুলে নিয়েছিলাম। সেগুলো নাকি দশটাকার কয়েন ছিলো। আমি ছোট মানুষ কি করে বুঝব? তোমরা বড় হয়েও যদি এইটুকু সামলে না রাখতে পারো…
যাক গে!
পরশু বড়দিন, কাল রাতে স্যান্টাক্লজ আসবে। আশা করি কিছুমিছু আনবে টানবে আমার জন্য। তোমরা সবাই খুব আনন্দ করো কিন্তু।

Comments