কিছুকথা - ১



এই আরেকটা নতুন সিরিজ শুরু হল, এখানে আশাকরি আমার জীবনের কিছু গল্প লিখব, আর আশা করি কিছু লিখতেই থাকব। জীবনের মণিমুক্তা সিরিজে আর কোনো কিছু লেখা হবে বলে মনে হয় না। কারণ বেশিরভাগ গল্পই কোনো না কোনো আত্মীয়ের বিভিন্ন কেলোর কীর্তি। আর সেই আত্মীয় ফেসবুকে থাক বা না থাক, আমি লিখে পাবলিকলি কানমলা খেতে রাজী নই। তার উপর আমার মা গত পরশু রিটায়ার করেছেন, এখন প্রচুর টাইম আশা করি, ফলে সব খুটিয়ে পড়বেন। আমি কোনো রিস্ক নিতেই রাজি নই। তাই কিছুকথা শুরু করলাম।

পর্ব ১
--------------
আমার বিয়ের বেশ কিছুদিন আগে আমি মহিষাদল গেছিলাম ২০১৩। মহিষাদল আমার সেজোজেঠুর বাড়ি। সেজোজেঠু ওখানের মহিষাদল রাজকলেজের প্রোফেসর ছিলেন। রিটায়ার করেছেন অনেকদিন। মারা গেছেন বাবার সাথে একই বছর ২০০৯। সেজোমা আছেন তখনো কিন্তু একেবারেই শয্যাশায়ী। মূলতঃ তাঁকে দেখতেই যাওয়া। আর তাছাড়া বাপ্পাদাদা , আমার সবথেকে ছোট্ট দাদা, আমার থেকে মাত্র ১৬ বছরের বড় আর পুপুবৌদি আমাকে আইবুড়োভাত খাওয়াবে। বুঝতেই পারছেন, আমি চিরকালই একটু হেঁহেঁ। মানে বাপ্পাদাদার সুযোগ্য বোন আর কি। আমাদের জয়নগরের বাড়ির সকলেরই একটু নোলা। আর মা তো বাঙাল, মানে আমি একাধারে দোকনো এবং বরিশাল দুটোই, আমার জমিয়ে ঝগড়া করতে পারার কথা, কিন্তু আমি পারি না খুব একটা। বরং দুই পারের পুরো নোলাটাই আমার মধ্যে বাস করে।
এই গল্প লেখার কারণ কিন্তু সেজোমা নন, আর আমার আইবুড়োভাতও নয়। এমন কি বাপ্পাদাদা আর পুপুবৌদির আদর আহ্লাদও নয়। এই গল্প আমার ভাইপো-ভাইঝির জন্য। নীলাভ আর নয়নিকা আমার ভাইপো এবং ভাইঝি। তারা তো বুইয়াপিসি এসেছে বলে আনন্দ কোথায় রাখবে ভেবে পাচ্ছে না। নীলাভ একটু বড়, একটু লাজুক। আর নয়নিকা স্মার্ট লেডি। ওই সাড়েতিন চার বছর বয়সেই তার প্রচুর সুচিন্তিত বক্তব্য আছে। সেদিনই নীলাভ বাবার বাইকে চড়ে একটু চিপস নিয়ে এলো বুইয়াপিসির জন্য।
এদিকে কন্যে দেখেছে দাদা জিততে চলেছে, তা সে হতে দেয় কি করে। সে নিজের খেলনাবাটির রান্নাঘর নিয়ে জমিয়ে বসল। আমি সবার আগে তোমাকে আইবুড়োভাত খাওয়াবো বুইয়াপিসি! এইহেন ঘোষণায় বুইয়াপিসির চোখে জিভে জল এসে একেক্কার। বলো তুমি কি খেতে চাও? মাইরি? চয়েস দিচ্ছে? কেউ এরকম ভালো কাজ করে না।
বিরিয়ানী আর চিকেন চাপ। বলে ফেলে ভাবলাম, বাচ্চা মানুষকে এইসব না বললেই হত। হয়তো ঘাবড়ে যাবে বেচারী। বাবা! সে ঘাবড়াবার পাত্রী নাকি? সাথে সাথে খেলনা হাঁড়ি কড়া চড়ে গেলো খেলনা গ্যাসে। চামচ দিয়ে সে কি নাড়ানাড়ি। সাথে সাথে রাজ্যের মশলা। সেখানে মৌরি থেকে শুরু করে মৌরিলজেন্স অবধি সব আছে।
অবশেষে দশ মিনিট পর তার ঘটাংঘট শেষ হল। সে একটা খেলনা থালায় আর বাটিতে আমাকে খাবার বেড়ে দিলো। আমি সবে একটু খেতে যাবো, তার আগেই বাধা। আসল দারুণ জিনিসটাই সে রান্নায় দিতে ভুলে গেছে। দাঁড়াও বিরিয়ানীতে আর চিকেন চাপে ছড়িয়ে দিই পরে দিলেও হেব্বি লাগবে গ্যারান্টি। তাই সই। খেলনা কোকাকোলা বোতল থেকে সে পুরো বিরিয়ানী আর চিকেন চাপের উপর ছড়িয়ে দিলো.... চকোলেট সস!!!!

Comments